দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি মুকুল রায়ের স্ত্রী। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিজেপির কোনও নেতা হাসপাতালে যাওয়া তো দূর, তেমন খোঁজখবর নেননি বলেই অভিযোগ মুকুল শিবিরের। আর সেখানেই মাস্টারস্ট্রোক দেন অভিষেক। ইয়াস বিধ্বস্ত দুই ২৪ পরগনা ঘুরে ওই দিনই তিনি চলে যান বাইপাস সংলগ্ন হাসপাতালে, মুকুল-জায়াকে দেখতে। সেখানে মুকুলের সঙ্গে দেখা না হলেও বেশ কিছুক্ষণ কথা হয় শুভ্রাংশুর সঙ্গে। পরে শুভ্রাংশু বলেন, 'অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যা করলেন, যা সৌজন্যকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে। আমার মাকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কাকীমা বলে ডাকে ছোটবেলা থেকে। এখন মায়ের শরীর ঠিক করাই প্রথম কাজ, বাড়ি ফিরে তারপর পরবর্তী পদক্ষেপ।' আর এই পরবর্তী পদক্ষেপ মানে যে দলবদল, তা নিয়ে সংশয়ী নয় কেউই।
advertisement
রাজনৈতিক মহল বলছে, এই কথা আসলে শুভ্রাংশুর নিজের নয়, মুকুল রায়ের। ঘনিষ্ঠ মহলে মুকুল নিজেও বলেছেন, 'অভিষেক আর শুভ্রাংশুর ছোট বেলার বন্ধুত্ব। ওঁরা একে অপরকে ভালো মতো চেনে, জানে। ওঁদের মধ্যে এমন সম্পর্কই স্বাভাবিক।' অর্থাৎ বার্তা স্পষ্ট। রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছে, যে অভিষেকের সঙ্গে সংঘাতের কারণেই একদা তৃণমূল ছেড়েছিলেন মুকুল, তাঁকে নিয়ে এতটা সুর নরমের মাধ্যমেই মনের বার্তা আসলে স্পষ্ট করে দিয়েছেন 'চাণক্য' মুকুল।
আর রাজ্য বিজেপিতে দিলীপ ঘোষের সঙ্গে মুকুল রায়ের সংঘাত সর্বজনবিদীত। সেই সংঘাত যেন বর্তমানে আরও মাথাচাড়া দিয়েছে। মুকুলের স্ত্রীকে দেখতে হাসপাতালে অভিষেক যাওয়ার পরই হাজির হন দিলীপ। কিন্তু তাতে বরফ গলেনি। বরং মুকুল জানান, 'আমাকে বা আমার পরিবারকে জানিয়ে হাসপাতালে যাননি দিলীপ ঘোষ। তাই কাকে দেখতে গিয়েছেন, আমি জানি না।' পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন দিলীপও। বলেছেন, 'হাসপাতালে কেউ দেখতে গেলে তাঁকে ধন্যবাদ জানানো উচিত। অসুস্থ কাউকে দেখতে জানিয়ে যেতে হবে নাকি?' ঘনিষ্ঠ মহলে মুকুল রায় বলেছেন, নরেন্দ্র মোদির আগে অমিত শাহ, জেপি নাড্ডারাও তাঁর স্ত্রীর খোঁজ নিতে ফোন করেছেন। কিন্তু রাজ্য বিজেপি নেতারা নন। অর্থাৎ, রাজ্য বিজেপি নিয়ে মুকুলের আর বিশেষ প্রত্যাশা নেই, তা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। আর সেই সঙ্গেই আরও মাথাচাড়া দিচ্ছে মুকুলের তৃণমূলে পুনরায় আগমনের বার্তা।
বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব অবশ্য মুকুলকে 'আটকাতে' চেষ্টার কসুর করছে না। নরেন্দ্র মোদি স্বয়ং ফোন করেছেন, এমনকী মুকুলকে আরও গুরুত্বপূর্ণ কোন পদ দেওয়া নিয়েও আলোচনা চলছে বলে খবর। কিন্তু মুকুলের ঘনিষ্ঠ মহল বলছে, 'দাদার মন তৈরি হয়ে গেছে।' সেই মনের কথা কবে মুখে আনেন মুকুল, সেটাই এখন দেখার।
