কোভিডে যখন গোটা দেশের মানুষ আতঙ্কিত, ঠিক সেই সময়েই মেদিনীপুরের গোপিবল্লভপুরে ফুটেফুটে কন্যা সন্তান অঞ্জলী দাসের জন্ম হয়। ৫ মাস বয়স থেকেই ছোট্ট অঞ্জলীর ঠাণ্ডা লাগতে থাকে। বুকে কাফ জমতে থাকে। কিন্তু দাস পরিবারের লোকেরা এই বিষয়টাকে প্রথমদিকে এতটা গুরুত্ব দেননি। কিন্তু একদিন অবস্থার অবনতি ঘটলে তাঁরা শিশুটিকে সরাকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। সেখানকার ডাক্তাররা শিশুকে পরীক্ষা করে কলকাতায় নিয়ে যেতে বলেন। শিশুটির বুকে কিছু একটা সমস্যা আছে, তাকে তাড়াতাড়ি বড় কোনও হৃদরোগ স্পেশালিস্টকে দেখাতে বলেন। শিশুটি এক জটিল জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত। তার শরীরের হৃদযন্ত্রের একটা অংশে রক্তের আদান প্রদানে সমস্যা দেখা দেয়। যখনই হৃদযন্ত্র থেকে শরীরে রক্তের আদান প্রদান ঘটছে তখনই এই সমস্যা বেড়ে যাচ্ছে। তবে সঠিক সময়ে চিকিৎসা হওয়ায় বাচ্চাটি এখন একেবারেই সুস্থ।
advertisement
মেডিকা সুপারস্পেশালিটি হসপিটাল রাজ্য সরকারের সঙ্গে শিশুদের হৃদযন্ত্রের নানা রোগের চিকিৎসা করে থাকে। ১১ মাসের শিশু কন্যাকে মেডিকেল কলেজ থেকে রেফার করা হয় মেডিকাতে। সরকারের শিশুসাথী প্রকল্পের আওতায় আনা হয় বিষয়টিকে। বাড়ি থেকে ৪ ঘণ্টার রাস্তা পেরিয়ে মাসের মেয়েকে মেডিকাতে ভর্তি করার দাস পরিবার।
সফল অস্ত্রপচার করেন ডাক্তার মৃণাল বন্ধু দাস সঙ্গে বাকি টিমও সহযোগিতা করেন। ডাক্তার অনিল কুমার সাংঘি জানিয়েছেন, " আমাদের কাছে যখন শিশুকে নিয়ে আসা হয় তখন তার অবস্থা খুব খারাপ। এবং তার ওজন একদম কম। তাকে দেখেই অস্ত্রপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই ধরণের বিরল রোগ খুব কম দেখতে পাওয়া যায় শিশুদের মধ্যে। সাধারণত ৪ থেকে ৫ মাস বয়সেই ধরা পড়ে এই রোগ। শিশুটির শরীরেও ওই বয়সেই রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। কিন্তু আমাদের কাছে যখন তাকে নিয়ে আসা হয় তার বয়স ১১ মাস। যা এই রোগের জন্য একটু বেশিই। আর্টারির ট্রান্সপোজিশন, ভিএসডি, পিডিএ, এবং পিএএইচ-এর মতো নানা সমস্যা দেখা দেয়। ১১ মাসের শিশুর জন্য এই অপারেশন খুবই ঝুঁকির ছিল।"
ডাক্তার মৃণাল বন্ধু দাস জানান, "অঞ্জলী দাসের বাড়ির লোকের মনে ভয় ছিল অপারেশন নিয়ে। শিশুর মাকে এখানে কাউন্সিলিং করে বোঝানো হয়, কেন এই অস্ত্রপচার দরকার। না হলে কি হতে পারে। তাঁরা আমাদের টিমের ওপর ভরসা রাখেন। এবং সফল ভাবে অস্ত্রপচার করা সম্ভব হয়। খুব কঠিন একটি কাজ ছিল শিশুটিকে বাঁচানো।"