ইতিমধ্যেই বেশ কিছু জায়গায় অভিযোগ উঠেছে সরকারি খাতের ত্রিপল ও অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী থেকে শুরু করে পুজোর আগে সরকারি উদ্যোগে জামা কাপড় বণ্টনের অব্যবস্থা নিয়ে। অভিযোগের তির অনেক ক্ষেত্রেই স্থানীয় নেতা কর্মীদের দিকে। সেই কথা কার্যত উল্লেখ করেই আজ ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারি।
আরও পড়ুন: পার পিস ২৫ টাকা! বাংলাদেশে বাজারে বাজারে ডিমের দামে আগুন! মাথায় হাত মধ্যবিত্তের
advertisement
তিনি লিখেছেন, 'পশ্চিমবঙ্গের মা মাটি মানুষের সরকার গত বছর দুর্গা পূজার সময়ে দরিদ্র দুঃস্থ মানুষদের জন্য কিছু শাড়ি কাপড় দিয়েছিল। বর্ষার সময়ে দিয়েছিল বিতরনের জন্য কিছু ত্রিপল। আমি সে গুলো ১৭টা পঞ্চায়েতে ভাগ করে দিয়েছিলাম বিতরনের জন্য। হয়ত তারা সে গুলো নিয়মমত বিতরন করে থাকবেন। তবে আমার যেটা আক্ষেপ ছিল - কোন মানুষ আমাকে এসে বলেনি যে হ্যাঁ আমি বিধায়ক কোটার কাপড় ত্রিপল পেয়েছি- আপনাকে ধন্যবাদ। যা শুনলে আমি আনন্দ পেতাম। বরং অনেকে উল্টে দোষারোপ করেছে , অমুকের পাকা দালান , সে তমুক নেতার আত্মীয় বলে সব পেয়েছে । আমি কিছু পাইনি।'
মনোরঞ্জন লেখেন, এই পরিস্থিতিতে তিনি এবার আমি আর কোনও নেতার কাছে কোনও জিনিস দেননি। সব জমা করে রেখেছিলেন বিধায়ক কার্যালয়ে। নেতাগনকে বলেছিলেন- 'যার ত্রিপল কাপড় দরকার বলে আপনার মনে হবে একটা স্লিপ লিখে আমার কাছে পাঠিয়ে দেবেন । আমি নিজের হাতে তাকে সে সব দেব। তবে - কেউ গলায় সোনার চেন হাতে সোনার আংটি পড়ে এসে বলবে আমার একটা ত্রিপল চাই ! সে তিনি যেই হোন আমি কিন্ত তাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেব।'
বিধায়ক এরপরেই জানান, কিন্তু এইভাবে স্লিপ লিখে দিতে অনেক নেতা সময় পাননি- মনের সায় পাননি। তাই তাঁর কাছে প্রচুর সরকারি মাল জমা হয়ে রয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এবার আবার পুজো আসছে। গোডাউন খালি করতে হবে। বাধ্য হয়ে তিনি এখন গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রকৃত অভাবী দুঃস্থ মানুষ খুঁজে খুঁজে তাঁদের হাতে কাপড়-ত্রিপল পৌঁছে দেবার কাজ করছেন। সবশেষে তৃণমূল বিধায়ক যোগ করেন, 'জানি, আমার অনেক কাজ ঠিক বিধায়কের উপযুক্ত কাজ নয়। তা হোক, তবু আমি এটাই করব। কারণ কাজটা তীব্র জরুরি।'
আরও পড়ুন: নজরে পঞ্চায়েত থেকে লোকসভা, তৈরি হবে দলের 'রোড ম্যাপ'! বঙ্গ বিজেপির 'বড়' দিন আগামিকাল
রিকশা এবার বিধানসভায়। বলাগড়ে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনোরঞ্জন ব্যাপারির নাম ঘোষণার পর থেকেই এই প্রচার শুরু হয়েছিল হুগলিতে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তখন বলেছিলেন, ''মাটির মানুষ মনোরঞ্জন ব্যাপারি। রান্না করেন, রিকশা টানেন, সাহিত্য চর্চাও করেন।''
উদ্বাস্তু হিসেবে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে এদেশে চলে এসেছিলেন মনোরঞ্জন ব্যাপারির পরিবার। তাঁর পর থেকেই জীবন যুদ্ধে দলিত এই লেখক। কখনও চা বেচেছেন, কখনও ডোমের কাজ করেছেন, কখনও বা স্কুলে রাধুঁনির কাজও করেছেন, আর রিকশাও টেনেছেন মনোরঞ্জন ব্যাপারি। তাঁর সাদামাটা জীবনযাপনই তাঁকে আলাদা করে দিয়েছে। এহেন মানুষের ওপর ভর করেই কঠিন বলাগড় কেন্দ্র থেকেও জয় আসে তৃণমূলের ঝুলিতে। আর বিধায়ক হওয়ার পর থেকেই মনোরঞ্জন ছুটে বেড়াচ্ছেন গোটা বিধানসভা এলাকা। কিনেছেন একটি টোটো। সেটিই বিধায়কের বাহন। তাঁর এই মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়ার, রাখঢাকহীন কথাবার্তায় মন কেড়েছেন এলাকার মানুষের। এবার সেই মনোরঞ্জনই পরোক্ষে মুখ খুললেন দলীয় নেতাদের একাংশের স্বজনপোষণ নিয়ে। বিষয়টি শাসকদলের জন্য অস্বস্তি খানিকটা বাইরে দিল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।