গত ২৫ শে নভেম্বর, বিধানসভায় সংবিধান দিবস স্মরণে এক অনুষ্ঠানে প্রথমার্ধের অধিবেশনের পর, বিরতির সময়, আচমকাই বিরোধী দলনেতাকে নিজের ঘরে ডেকে পাঠান মুখ্যমন্ত্রী। প্রথমার্ধের অধিবেশন শেষে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তখন নিজের ঘরে। বিধানসভার মার্শাল এসে তাঁকে জানান, 'লিডার অব দ্য হাউস অনারেবল্ সিএম আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন।' প্রথা মেনে এই অনুরোধ গ্রহণ করলেও, আরও তিন বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে তাঁর ঘরে যান। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে সৌজন্যতা বশত মুখ্যমন্ত্রীকে প্রণাম করেন শুভেন্দু। এরপর, সাকুল্যে ৩ থেকে ৪ মিনিট মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে কাটিয়ে সদলবলে ফিরে আসেন শুভেন্দু।
advertisement
আরও পড়ুন: এফোঁড় ওফোঁড় ত্রিশূল বুকের মাঝ বরাবর! ঠিক 'এইভাবে' অসাধ্য সাধন NRS এর চিকিৎসকদের!
কিন্তু, তারপরেই মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে সেই বার্তা। মুখ্যমন্ত্রীকে প্রণাম করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুরু হয়ে যায় রাজনৈতিক জল্পনা আর অঙ্ক কষা। কলমচিরা বসে পড়েন এই ঘটনার রাজনৈতিক তাৎপর্য ব্যাখ্যায়। কিছুটা অস্বস্তিতে পরে দলের ভিতরে ও বাইরে ওঠা প্রশ্নের যুৎসই একটা জবাব খুঁজে পেতে বেশ কিছুটা সময় নেয় রাজ্য বিজেপি।
রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, সৌজন্য থাকতেই পারে। মুখ্যমন্ত্রী লিডার অব দ্য হাউস। উনি ডাকলে যেতেই পারেন। এর মধ্যে অন্য অর্থ খোঁজার কোনও প্রশ্ন নেই। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছিলেন, এটা শুভেন্দু অধিকারীর বিষয়। এটা তাঁকেই জিজ্ঞেস করতে হবে। এরই মধ্যে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মন্তব্যে 'সৌজন্যের রাজনীতি' নতুন মাত্রা পায়। দিলীপ বলেন, কেউ কালীঘাটে গিয়ে প্রণাম করে, কেউ বিধানসভায়।
দলের অন্দরে প্রশ্ন ওঠে, ২১ এর নির্বাচনের পর শাসক দলের সন্ত্রাসে, যেখানে দলের হাজারো কর্মী আক্রান্ত, ঘরছাড়া। ৫৬ জন কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন বলে অভিযোগ বিজেপির, তখন তৃণমূল নেত্রীকে প্রণাম করে কোন সৌজন্য দেখালেন বিরোধী দলনেতা ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপির লড়াইয়ের অন্যতম মুখ শুভেন্দু অধিকারী? জল্পনা ডানা মেলতে থাকায়, বিজেপিকে বলতে বাধ্য হতে হয়, বিজেপি ব্যক্তি আক্রমনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। তৃণমূলকে রাজ্য থেকে উৎখাত করার লড়াইয়ে বিজেপির অবস্থান আগেও যা ছিল, আজও তাই আছে। ঘটনার ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই, শুভেন্দু নিজেই সুর চড়ান রাজনীতির ময়দানে। 'এই মুখ্যমন্ত্রীকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী করেই ছাড়ব', বলে ফের সরব হন শুভেন্দু। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বিরোধী দলনেতার সাক্ষাত ও প্রণামকে ঘিরে নতুন করে ডানা মেলতে থাকা 'তৃণমূল-বিজেপি সেটিং তত্ব' এর অভিযোগকে টেনে এনে নিজেই তা নস্যাৎ করেন শুভেন্দু।
যদিও রাজনৈতিক মহলের মতে, শুভেন্দু-সহ রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব, যেভাবেই বিষয়টিকে নিছক সৌজন্য বলে ব্যাখ্যা দিন না কেন, জনমানসে এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বিজেপি ও শুভেন্দু অধিকারী নিজেও বেশ অস্বস্তিতে। মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা বা বিধায়ক শঙ্কর ঘোষরা তাই বিষয়টিকে মুখ্যমন্ত্রীর চক্রান্ত বা বিভ্রান্তি ছড়ানোর কৌশল বলেও পাল্টা মন্তব্য করেন।
আরও পড়ুন: বলুন তো জল কেন 'ভেজা' হয়? উত্তর খুঁজে হয়রান ৯৯ শতাংশ মানুষ! আপনি জানলে কিন্তু আপনিই সেরা!
কিন্তু, ঘটনার চার দিন পরেও, রাজ্য রাজনীতিতে মমতা-শুভেন্দু সাক্ষাৎকে নিয়ে চর্চা থেমে থাকেনি। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের মতে, ডিসেম্বরের পর রাজ্য সরকারকে চলতে দেব না বলে হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর এই সৌজন্যের রাজনীতির জেরে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে দলের মুখ পুড়ল। এখনি, রাজনৈতিক ভাবে এর 'পাল্টা' দিতে না পারলে আখেরে তৃণমূলই এর ফায়দা তুলবে। সে কারনেই মমতার 'মোদী প্রণাম' এর ছবিকে সামনে আনতে মরীয়া বিজেপি।
বিজেপির সূত্রের দাবি, দিল্লিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতের সময় মুখ্যমন্ত্রী নাকি প্রধানমন্ত্রীকে প্রণাম করে থাকেন। কিন্তু, প্রোটোকল মেনেই সেই ছবি এতদিন সামনে আনেনি বিজেপি। এবার সৌজন্য রাজনীতির ধাক্কা সামলাতে তাকেই হাতিয়ার করতে চায় রাজ্য বিজেপি। তবে, রাজ্য বিজেপি চাইলেও, দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর দফতর তা মানবে কি না সেটা এখনও নিশ্চিত নয়। কারণ সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় বিজেপির একাংশের মতে, রাজ্য রাজনীতির এই কাদা ছোড়াছুড়িতে প্রধানমন্ত্রীকে টেনে আনা ঠিক হবে না। তাতে দল ও প্রধানমন্ত্রীর সম্মান বাড়বে না।