২১ হাজারের বেশি জায়গা চিহ্নিত হয়েছে। এগারো হাজারের বেশি অভিযোগ এসেছে। অভিযোগ আসলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কোনও কোনও আধিকারিক এই কুকর্মে যুক্ত ছিলেন। ৩৭৩ সংস্থাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ১১২ চুক্তি গাফিলতির কারণে বাতিল করা হয়েছে। ২৩ আধিকারিককেও শো-কজ করা হয়েছে।” সাফ জানান মমতা। এইদিনের বৈঠকে তিনি বলেন, “ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সংস্থার সাথে মুখ্যসচিব মিটিং করেছেন। আশা করি তাদের থেকে সাহায্য পাব।”
advertisement
আরও পড়ুন: আরজি কর-কাণ্ডে লুকনো আসল রহস্যের খোঁজ পেল CBI! সন্দীপ-অভিজিৎকে নিয়ে বড় নির্দেশ
এই বৈঠকে মমতার কথায় উঠে আসে পরিযায়ী শ্রমিক প্রসঙ্গও। তিনি বলেন, “কর্মশ্রী থেকে ম্যানডেট তৈরি হয়েছে। গ্রামের মানুষ মজুরি পেয়েছেন। পরিযায়ী শ্রমিকদের যাদের অন্য রাজ্য বিতাড়িত করেছে, তাদের কাজ দেওয়া হয়েছে।”
অনেক সময়েই মুখ্যমন্ত্রী ক্ষোভপ্রকাশ করছিলেন তাঁকে কিছু কিছু বিষয় পরে জানানো হচ্ছে। সে বিষয়েও এইদিন কড়া বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমাকে যখন ইনফরমেশন দেবে তখন আপডেটেড দেবে। সঠিক ইনফরমেশন না দেওয়া অপরাধ।”
আরও পড়ুন: রাজ্যপাল-মুখ্যমন্ত্রী সাক্ষাৎ! কী কী বিষয়ে হবে বৈঠক? তাকিয়ে বাংলা
এরপরেই বৈঠকে উপস্থিত বিভিন্ন আধিকারিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “জেলাশাসক, জেলাপুলিশ সুপারদের বলব, যে রাস্তা কাটা হচ্ছে, তা আর সারানো হচ্ছে না। যে দফতর সেই কাজ করবে না। যে আধিকারিক কাজ করবে না, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভাঙা রাস্তায় জল পড়লে আরও খারাপ হয়। পুলিশকে বারবার বলা হয়েছে কাঁচা শাক সবজি আর মাছ ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। পুলিশকে বারবার বলছি, ব্যবস্থা নিতে। পথশ্রী প্রকল্প দিয়ে আমরা রাস্তা করছি। সেই রাস্তা ভেঙে দিচ্ছে কেউ নজর করছেন না? কেন্দ্র এক টাকা দিচ্ছে না ।আমি গো সার্কিট হাউজে গিয়ে থাকলে তার ভাড়া দিই। আপনাদের মনে হয় না সরকারের টাকা নষ্ট হচ্ছে। সরকারের টাকা মানে পাবলিকের টাকা।”
এই বৈঠকেই পানীয় জলের বিষয় নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন,”পানীয় জলের কাজ করতে গিয়ে, কিছু ঠিকাদার রাস্তা খারাপ করছে। কিন্তু কোনও কাজ তারা করেনা।অন্যের দফতর বলে এড়িয়ে যায়। আবার, পিএইচই’তে যে সব ঠিকাদার কাজ করে তারা অগ্রিম টাকা পেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের কাজ শেষ হচ্ছে না। ট্যাঙ্ক হয়েছে পাইপ লাইন নেই। আবার পাইপ লাইন আছে ট্যাঙ্ক নেই। আপনারা বলছেন ৯০ লক্ষ লোক জল পেয়েছে, তারা কি সত্যিই পেয়েছে? আমার মনে হয় একটা নিরপেক্ষ সংস্থা দিয়ে এর সমীক্ষা করা উচিত। সাধারণ মানুষ জল পাবে না। এটা বরদাস্ত করব না।”
এরপরেই তিনি বলেন, “পঞ্চায়েত দফতরকে আরও সক্রিয় ভাবে কাজ করতে হবে। যে সব ঠিকাদার কাজ করছে না। তাদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নিন। যে টাকা ধ্বংস করেছে, টাকা তাকেই দিতে হবে। প্রয়োজনে তাদের সম্পত্তি ক্রোক করে টাকা নেবেন।”
পানীয় জল সঠিকভাবে মানুষের কাছে পৌঁছছে না বলে এর আগেও বহুবার ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই নিয়ে গত সপ্তাহেও বৈঠকেও বসেন মমতা। আর মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের পরেই কড়া পদক্ষেপ নিতে শুরু করে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর।
সূত্রের খবর, পানীয় জলের বে-আইনি ব্যবহার নিয়ে ইতিমধ্যেই ২০ হাজার অভিযোগ সামনে এসেছে। এফ আই আর দায়ের হয়েছে ৪৬৭’টি।
রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মোট ১৯০৬২ জায়গা থেকে অভিযোগ এসেছে বলে খবর।পানীয় জলের বে-আইনি ব্যবহার রোধে ইতিমধ্যেই হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। পানীয় জল সংক্রান্ত বিষয়ে অভিযোগ জানাতে হলে ৮৯০২০৫২২২২ ও ৮৯০২০৬৬৬৬৬ যে কোনও নম্বরে অভিযোগ জানানো যাবে।
এর আগে পানীয় জল নিয়ে একাধিক বার ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সময় তিনি আগেই জানিয়েছিলেন, “প্রায় তিন মাস ধরে মন্ত্রী গোষ্ঠী দেখছে। পাইপ কেটে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছে। গ্রামে জল ঢুকছে না। ডিপিআর ভুল কিছু জায়গায়। তাই জল যাচ্ছে না। কেউ পাইপ কেটে জল সেচে ব্যবহার করছে। এটা বেআইনি। সেচে জল না পেলে সেচ দফতর দেখবে। খাবার জল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেউ ভুল টেন্ডার, কেউ ভুল ডিপিআর করেছে।”
এরপরেই তিনি জানান, “প্রতি সোমবার এবার মিটিং হবে। ৪৪৮ অভিযোগ এসেছে। খাবার জলের পাইপ কাটা অন্যায়। এটা করলে ফৌজদারি মামলা হবে। গ্রেফতার হবে। ১৮২৩০ স্থান মিসইউজ হয়েছে। কেন বিডিও, কেন এসডিও দেখেনি এগুলো। কোনও নেতার কথা শুনবেন না। কোনও রাজনৈতিক দলের কথা শুনবেন না। কোনও পুলিশ কমপ্রোমাইজ করবেন না। দুই ২৪ পরগণা ও পূর্ব মেদিনীপুর থেকে বেশি অভিযোগ এসেছে। এছাড়া নদীয়া, পূর্ব বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে অভিযোগ এসেছে। সবচেয়ে ভালো অবস্থা কালিম্পংয়ের। সেখানে এর অপব্যবহার নেই।
কেউ সমঝোতা করলে, তার চাকরি আগে যাবে। সরকার সহ্য করবে না। নিজের এলাকা দেখে অন্য এলাকা বঞ্চিত করলে। সরকার কড়া ব্যবস্থা নেবে।।” এরপরেই কেন্দ্রকে নিশানা করে তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ৯ লাখের বেশি পরিবার-এর জন্য জল পাচ্ছে না।