শুক্রবার হাওড়ায় বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জোকা-বিবাদী বাগ মেট্রো প্রকল্পের কথা বলতে গিয়ে মুখ্য়মন্ত্রী যেভাবে তাঁর একদা বিশ্বস্ত সৈনিক শোভন চট্টোপাধ্য়ায়ের প্রশংসা করেছেন, তা নজর এড়ায়নি রাজনৈতিক মহলের। তাও আবার খোদ প্রধানমন্ত্রীর সামনেই।
বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বক্তব্য় রাখার সময় তিনি জোকা-তারাতলা মেট্রো প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেন। কারণ কলকাতায় এসে নতুন এই মেট্রো পরিষেবারও উদ্বোধন করার কথা ছিল তাঁর।
advertisement
আরও পড়ুন: শুরুতেই সুপারহিট বন্দে ভারত! বিক্রি হয়ে গেল প্রথম দু' দিনের সব টিকিট
প্রধানমন্ত্রীর পরে বক্তব্য় রাখতে গিয়ে জোকা- তারাতলা মেট্রো প্রকল্পের কথা তোলেন মুখ্য়মন্ত্রীও। মনে করিয়ে দেন, রেলমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর হাত ধরেই এই প্রকল্পের উদ্বোধন হয়েছিল। মুখ্য়মন্ত্রীর কথায় এটি তাঁর স্বপ্নের প্রকল্প। নরেন্দ্র মোদিকে উদ্দেশ করে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলেন, 'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জেনে খুশি হবেন, আমি রেলমন্ত্রী থাকাকালীন এই প্রকল্পের উদ্বোধন হয়েছিল। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিলও উপস্থিত ছিলেন। আজ আমি খুব খুশি, বলা যায় এটা আমার স্বপ্নের প্রকল্প ছিল।'
এর পরেই কলকাতার প্রাক্তন মেয়রের প্রশংসা করে মুখ্য়মন্ত্রী বলেন, 'এই প্রকল্পে জমি জট কাটানোর জন্য় কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্য়ায় বড় ভূমিকা নিয়ছিলেন। মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।'
জোকায় কারশেড সহ মেট্রো পথ নির্মাণের জন্য় দীর্ঘদিন জমি জটে আটকে ছিল জোকা-বিবাদী বাগ মেট্রো প্রকল্প। মেয়র এবং বেহালা এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক হিসেবে সেই সমস্ত জট কাটানোয় বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন শোভন। এ দিন সেকথা মনে করিয়ে দিলেন মমতা নিজেই। বুঝিয়ে দিলেন, তাঁর স্বপ্নের প্রকল্পের বাস্তবায়নে প্রিয় কাননের ভূমিকা ভোলেননি তিনি।
আরও পড়ুন: মুখ্য়মন্ত্রীকে তুমি বলে সম্বোধন, অপমান! শুভেন্দুর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ কুণালের
মুখ্য়মন্ত্রীর এই প্রশংসার পরই ফের শোভনের তৃণমূলে প্রত্য়াবর্তনের জল্পনা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। এর পিছনে একাধিক কারণও খুঁজে পাচ্ছে রাজনৈতিক মহল। চলতি বছরের জুন মাসেই বান্ধবী বৈশাখীকে নিয়ে নবান্নে গিয়ে মুখ্য়মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন শোভন। তার আগে গতবছর মমতার কালীঘাটের বাড়িতে ভাইফোঁটাও নিতে গিয়েছিলেন তিনি। আবার সাম্প্রতিক কালে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের কৃতিত্ব নিয়ে শুভেন্দু অধিকারীর করা মন্তব্য়ের পাল্টা মমতার হয়ে সওয়াল করতে আসরে নামেন শোভন। কিন্তু এত কিছুর পরেও দুইয়ে দুইয়ে চার হয়নি। সক্রিয় রাজনীতি থেকে শোভন এখনও অনেক দূরে।
কিন্তু রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শোভনের দলত্য়াগ এবং পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের গ্রেফতারির পর তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি বেহালা অঞ্চলে সে অর্থে তৃণমূলের কোনও প্রভাবশালী মুখ নেই। তাছাড়া পঞ্চায়েত এবং লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রশাসক এবং রাজনীতিক শোভনের অভিজ্ঞতাও তৃণমূলের কাজেই লাগবে। কারণ এক নারদ কেলেঙ্কারি ছাড়া শোভনের বিরুদ্ধেও বড় কোনও দুর্নীতির অভিযোগ নেই।
এই পরিস্থিতিতে মমতার মুখে শোভনের প্রশংসা যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী বলেই মত রাজনৈতিক মহলের। তৃণমূলের অন্দরের সমীকরণ এবং নিজের ব্য়ক্তিগত সমস্য়া কাটিয়ে উঠে নতুন বছরে শোভন ফের নতুন রাজনৈতিক ইনিংস শুরু করেন কি না, সেটাই এখন দেখার।