পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগণার মতো উপকূলবর্তী জেলার প্রশাসনের কর্তারা দফায় দফায় বৈঠক করে বিপর্যয় মোকাবিলার রূপরেখা প্রস্তুত করেছন।ফ্লাড সেন্টার সহ বিপর্যয় মোকাবিলার যাবতীয় পরিকাঠামো যুদ্ধকালীন তৎপরতায় প্রস্তুত করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে মাইকের মাধ্যমে প্রচার চালানো হচ্ছে।মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে । পাশাপাশি, সমুদ্রে থাকা মৎস্যজীবীদের আগামী কালের মধ্যেই ফিরে আসতে বলা হয়েছে।উপকূল রক্ষী বাহিনীর তরফে জল ও আকাশপথে নজরদারি চালানো হচ্ছে। আসন্ন দুর্যোগের আশঙ্কায় জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকেও উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে মোতায়েন করা হয়েছে।ইতিমধ্যেই গুজরাত থেকে বাহিনীর ১২ টি দল রাজ্যে এসেছে। আজ বিকেলে আরও কয়েকটি দল রাজ্যে আসতে পারে বলে জানা গেছে।
advertisement
রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই রাজ্যের উপকূলবর্তী জেলায় সতর্কতা জারি করেছে। সমুদ্র তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্ন সাইক্লোন শেল্টার, ফ্লাড রিলিফ সেন্টারগুলিকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। রাখা হয়েছে শুকনো খাবার, বেবিফুড, টর্চ। পুলিশ, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর, জরুরি পরিষেবা দফতর , বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, পুরসভা সহ সব দফতর একত্রে সমন্বয় করে এই “যশ” সাইক্লোনের (Cyclone Yaas) মোকাবিলায় কাজ করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। নবান্নে কন্ট্রোল রুম করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২৫ মে থেকে নিজে থাকবেন এই কন্ট্রোল রুমে। বিদ্যুৎ ভবনেও কন্ট্রোল রুম করা হচ্ছে। সেখানেও ২৫ ও ২৬ মে রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস থাকবেন। এছাড়া কলকাতার জন্য লালবাজারের তরফে ২০টি টিম গঠন করা হয়েছে।
জরুরি ভিত্তিতে বিপন্ন মানুষের কাছে পুলিশের টিম যাতে পৌঁছে যেতে পারে এই টিম সেই কাজ করবে।এদিকে ইয়াস-এর মোকাবিলায় সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়েছে উপকূলবর্তী জেলা প্রশাসন। পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলবর্তী গ্রামগুলিতে ঘুরে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে সতর্কতামূলক প্রচার চালাচ্ছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই ২ কোম্পানি এনডিআরএফ মোতায়েন করা হয়েছে জেলায়। খুব তাড়াতাড়ি আনা হবে আরও ২ কোম্পানি। সেকেন্ড এনডিআরএফ-এর ইনস্পেক্টর রাজকুমার শীল জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে দিঘার উপকুল এলাকার গ্রামগুলিতে জওয়ানরা সজাগ। গ্রামবাসীদের বোঝানো হচ্ছে, তাঁরা যেন ঝড়ের আগেই কাঁচা বাড়ি ছেড়ে সরকারি আশ্রয়স্থলে চলে যান। ময়দানে নেমেছেন রাজকুমার শীল । তিনি গ্রামবাসীদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, “আপনারা দুশ্চিন্তা করবেন না। ঝড়ের মধ্যে কেউ আটকে পড়লে আমরা সর্বশক্তি নিয়ে আপনাদের সাহায্য করব। বিপর্যয় ঘটার আগেই আমরা আপনাদের সুরক্ষিত স্থানে আমরা পৌঁছে দেব।” গ্রামবাসীদের উদ্দেশে একাধিক সতর্ক বার্তাও জারি করা হয়েছে এনডিআরএফ-এর তরফে। তাঁদের এই সময়ের মধ্যে মাছ ধরতে সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
শনিবার “যশ” নিয়ে প্রশাসনের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে দিঘায় যান পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি। তিনি দিঘা-ওড়িশা সীমানার পদিমা ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা ঘুরে দেখেন। জেলাশাসক বলেন, “আমি রামনগর, কাঁথি এবং খেজুরির বিভিন্ন এলাকার পরিদর্শন করছি। যে সব এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি বেশি হতে পারে সেখানে স্থানীয় বাসিন্দাদের কোথায় সরানো হবে, কোথায় রাখা হবে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা স্থানীয় হাসপাতালগুলিও ঘুরে দেখছি। বিপর্যয়ের পর যদি বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয়, সেই সময় বিকল্প কী ব্যবস্থা রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সমুদ্রের বাঁধ নির্মাণের কাজও খতিয়ে দেখছি। কাদের, কোথায় কী ভাবে নিয়ে যাওয়া হবে তার পরিকল্পনা আজ রাতের মধ্যে সারা হয়ে যাবে। কেউ করোনা আক্রান্ত হলে তাঁদের সেফ হোমে রাখার যথোপযুক্ত ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।”