মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্যের তরফে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে যাতে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিল্লিতে বদলি করা না হয়৷
সরাসরি না বললেও মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বুঝিয়ে দিয়েছেন, শুক্রবার কলাইকুন্ডায় প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক বিতর্কের জেরেই কেন্দ্রের রোষে পড়তে হল মুখ্যসচিবকে৷ কারণ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যসচিবও শুক্রবার কলাইকুন্ডায় গিয়েছিলেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'ওনার দোষ কী, উনি আমার সঙ্গে কাজ করছেন৷ রাজ্যের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছে৷' মমতা অভিযোগ করেছেন, এ ভাবে মুখ্যসচিবকে দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়ে অন্যান্য রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং আইএএস অফিসারদেরও অপমান করেছে কেন্দ্র৷ তিনি বলেন, 'আমাকে একা বিরক্ত করছেন না, আমার সচিব, সচিবালয়কে বিরক্ত করছেন৷ গোটা দেশের মুখ্যসচিবদের, আইএএস অফিসারদের বিরক্ত করছেন৷ সরকার, মুখ্যসচিব, সবাইকে বিরক্ত করছেন৷ কেন এ ভাবে আচরণ করছেন? আমরা ঐতিহাসিক জয় পেয়েছি বলে? ভোটের সময় কী করেননি? দয়া করে মানুষের রায় মেনে নিন৷ এ ভাবে যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোকে ভেঙে গুড়িয়ে দেবেন না৷ কোনও রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় থাকবে, কোথাও বিরোধীরা থাকবে৷ কেন পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে একরকম, অন্য রাজ্যের ক্ষেত্রে একরকম নিয়ম হবে কেন? '
advertisement
মুখ্যসচিবের বদলির নির্দেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'মুখ্যসচিব রাজ্য সরকারি অফিসার৷ রাজ্যের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই তাঁকে বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ তাঁর কর্মজীবনে ৩১ মে শেষ হচ্ছে৷ এই সময় তাঁকে বদলির নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে? ন্যূনতম সৌজন্যটুকুও দেখাবেন না? আলাপন বন্দ্যাোপাধ্যায় বাঙালি বলেই কি এত অপমান? এই চিঠি প্রত্যাহার করা হোক৷ মুখ্যসচিব যাতে করোনা আক্রান্ত মানুষ এবং ঘূর্ণিঝড়ে বিপর্যস্ত মানুষের জন্য কাজ করতে পারেন, সেই সুযোগ করে দিন৷'
মমতা এ দিন বলেন বাংলার স্বার্থে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পা ছুঁতেও রাজি৷ বাংলার স্বার্থে তিনি যতদূর খুশি যেতে পারেন৷ কিন্তু নির্বাচিত সরকারের প্রধান হিসেবে তাঁর প্রাপ্য সম্মান পাওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'কাল রাত থেকে মিথ্যে খবরের উপর ভিত্তি করে যেভাবে আমাকে অপমান করা হয়েছে, তাতে আমি ব্যথিত৷ প্রধানমন্ত্রীর দফতরের থেকে এই খবরগুলি খাওয়ানো হচ্ছে৷ মন্ত্রীরা তোতাপাখির বুলির মতো সেই মিথ্যে অভিযোগ করে চলেছেন৷ '
মুখ্যসচিবের বদলি বিতর্কে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'রাত জেগে, দিন জেগে আমরা যখন অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ করছি তখন কি প্রধানমন্ত্রীর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাজ একটা সরকারকে বদনাম করা? প্রত্যেকটা পদে পদে বিজেপি যা বলছে তাই করছে৷ এখনও কী করছে, সবাই দেখছেন৷'
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন মনে করিয়ে দিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতি এবং ইয়াস ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলার কথা মাথায় রেখে গত ১০ মে মুখ্যসচিব পদে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য কেন্দ্রকে চিঠি দেন তিনি৷ ২৪ মে কেন্দ্রের তরফে জবাব দিয়ে সেই আবেদনে সম্মতি দেওয়া হয়৷ তার চার দিনের মধ্যেই কীভাবে সেই মুখ্যসচিবকেই দিল্লিতে তলব করা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী৷