মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সাসপেন্ড হওয়া চিকিৎসকদের মধ্যে রয়েছেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আরএমও সৌমেন দাস৷ এ ছাড়াও দিলীপকুমার পাল নামে আরও এক অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পদে থাকা চিকিৎসককেও সাসপেন্ড করা হয়েছে৷ অভিযোগ, ঘটনার দিন ওই চিকিৎসকেরই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ প্রসূতিদের অস্ত্রোপচার করা কথা ছিল৷ কিন্তু হাসপাতালে ডিউটি থাকলেও সেই সময় তিনি মেদিনীপুর শহর থেকে প্রায় তিরিশ কিলোমিটার দূরে ডেবরার বালিচকে একটি নার্সিং হোমে গিয়ে অন্য অস্ত্রোপচার করেছিলেন৷
advertisement
আরও পড়ুন: রক্তের ভাসছে শরীর, পিঠে গেঁথে ছুরি! প্রায় বেহুঁশ সইফকে কীভাবে বাঁচালেন একা ইব্রাহিম! যেন সিনেমা…
এর পাশাপাশি হাসপাতালের এমএসভিপি জয়ন্তকুমার রাউথ, হিমাদ্রি নায়েক এবং মহম্মদ আলাউদ্দিন নামে আরও দুই অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, সিনিয়র রেসিডেন্ট চিকিৎসক পল্লবী বন্দ্যোপাধ্যায়কেও সাসপেন্ড করা হচ্ছে৷ পাশাপাশি মৌমিতা মণ্ডল, ভাগ্যশ্রী কুণ্ডু, সুশান্ত মণ্ডল, পূজা সাহা, মণীশ কুমার এবং জাগৃতি ঘোষ নামে ছ জন পিজিটি পড়ুয়াকেও সাসপেন্ড করা হচ্ছে৷
মুখ্যমন্ত্রী এবং মুখ্যসচিব দু জনেই জানিয়েছেন, এই ঘটনায় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তৈরি করে দেওয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দল এবং সিআইডি তদন্ত রিপোর্ট মিলে গিয়েছে৷ দুটি রিপোর্টেই হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসক এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কথাই উঠে এসেছে৷
মুখ্যসচিব বলেন, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের পাঠানো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কমিটি এবং সিআইডি তদন্তেই এই ঘটনায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠে এসেছে৷ সিনিয়র চিকিৎসক, আরএমও-র অনুপস্থিতিতে জুনিয়র ট্রেনি চিকিৎসকরা ওই অস্ত্রোপচারগুলি করেন বলেও অভিযোগ৷
মুখ্যসচিব আরও জানান, ‘ঘটনার দিন হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসকের বদলে ফার্স্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং সেকেন্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট মিলিয়ে প্রসূতিদের অস্ত্রোপচার করেন৷ একজন সার্জেন্ যেভাবে অস্ত্রোপচার করেন সেভাবে অস্ত্রোপচার করা হয়নি৷ সংক্রমণ রুখতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি৷ আরএমও নিজেও উপস্থিত ছিলেন না৷ কোনও প্রোটোকল মানা হয়নি৷ সিনিয়র চিকিৎসক এবং ম্যানেজমেন্ট যাদের পুরো বিষয়টি দেখার দায়িত্ব ছিল, তাঁরা নিজেদের দায়িত্ব পালন করেননি৷ এমন কি অস্ত্রোপচারের পর প্রোটোকল ভেঙে প্রসূতিদের পরিবারের থেকে মুচলেকাও লিখিয়ে নেন জুনিয়র চিকিৎসকরা৷’
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বিষ স্যালাইন দেওয়ার ফলে চার জন প্রসূতি এবং তাঁদর সদ্যোজাত সন্তান অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ তাঁদের মধ্যে আগেই এক প্রসূতির মৃত্যু হয়৷ আজ সকালে মৃত্যু হয়েছে অন্য এক প্রসূতির সদ্যোজাত সন্তানেরও৷ বাকি তিন প্রসূতিকে চিকিৎসার জন্য কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে৷ তাঁদের মধ্যে দু জন অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠলেও একজন প্রসূতি এখনও আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷
তবে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর সামনেই রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম জানান, যে স্যালাইন নিয়ে বিতর্ক সেগুলি একাধিক বার পরীক্ষা করার পরই ব্যবহারের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল৷ এ কথা শুনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এখন তো মনে হচ্ছে এটা সম্পূর্ণ অন্য ঘটনা৷’