চৈত্র সেল উপলক্ষে প্রচুর সামগ্রী মজুদ করে রেখেছিলেন ব্যবসায়ীরা। বছরের এই সময়টার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন তারা। কিন্তু লকডাউন সমস্ত হিসেব-নিকেশ ওলট-পালট করে দিল। কলকাতা শহরে প্রায় ১ লক্ষ হকার রয়েছেন। গড়িয়াহাট হাতিবাগান কিংবা নিউমার্কেটে হকারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। চৈত্র সেলের সময় এক-একজন হকারের কমপক্ষে কুড়ি হাজার কিংবা তারও বেশি, আবার কারও কারও আরও বেশি টাকার সামগ্রী প্রতিদিন বিক্রি হয়। এই সময় আগামী চার মাসের ব্যবসার টাকা মজুত করে রাখেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু লকডাউনের দিন থেকেই রোজগার পুরোপুরি বন্ধ হওয়ায় এখন মাথায় হাত ব্যবসায়ীদের।
advertisement
বছরের তিনটি সময় ব্যবসার ক্ষেত্রে উপযুক্ত। দুর্গোৎসব, বিবাহ অনুষ্ঠান আর চৈত্র সেল । এই সময়ে ব্যবসায়ীদের একেবারে নাওয়া-খাওয়ার সময় থাকেনা। কিন্তু আজ প্রাণচঞ্চল সমস্ত বাজার নিস্তব্ধ। নিউমার্কেট থেকে গড়িয়াহাট কিম্বা হাতিবাগান খাঁ খাঁ করছে। ফুটপাথগুলো গুমড়ে গুমড়ে কাঁদছে। ক্রেতা বিক্রেতার কোলাহলেে গমগম করত এই সময় গড়িয়াহাট নিউমার্কেট সহ একাধিক বাজার এলাকা। সব জায়গাতেই শ্মশানের নিস্তব্ধতা।
সন্দীপ পাল, সরফরাজ আলম কিংবা মোহন দাসের মত অনেক হকারদেরই এখন একটাই কথা,' ভাবিনি চৈত্র সেলের সময় এভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকতেে হব'। লকডাউনের কারণে যে বিপুল আর্থিক ক্ষতি হল তা পূরণ হবে কি করে এখন তা ভেবেই কুলকিনারা পাচ্ছেন না কলকাতার হকাররা। হকার্স ফেডারেশনের সম্পাদক শক্তিমান ঘোষ বলেন, 'এই চৈত্র সেলের সময় ব্যবসার মাধ্যমে আগামী দুর্গা পুজোর সময় ব্যবসা করার টাকা মজুত করে রাখতেন হকাররা। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির জেরে এখন ওরা পরিবার-পরিজন নিয়ে সংসার চালাবে কী করে তাই ভেবে পাচ্ছেন না।
এই সময় যেহেতু রোজগার পুরোপুরি বন্ধ তাই ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ওদের পাশে ত্রাণ সামগ্রী দিয়ে আমরা সাধ্যমতো রয়েছি'। নববর্ষের প্রাক্কালে তাদের ব্যবসাও যে ভীষণ লোকসানের মুখে সেকথাও জানান কলকাতা শহরের বেশ কিছু বড় বস্ত্র বিপনীর কর্ণধাররা। তাদেরই অন্যতম স্বর্নালি কাঞ্জিলাল কিংবা সৌমজিৎ লাহার কথায়, 'এই পরিস্থিতির সম্মুখীন ষে হতে হবে আমাদের তা কখনও ভাবিনি। কতদিনে পরিস্থিতি ষে স্বাভাবিক হবে তাও কিছু বুঝে উঠতে পারছিনা'। একই বক্তব্য কলকাতা শহরের ঝাঁ-চকচকে শপিং মল কর্তৃপক্ষেরও। প্রত্যেকেরই একটাই কথা, নববর্ষের কিংবা চৈত্র সেলের বাজার এবার পুরো মাটি হয়ে গেল। কার্যত মাথায় হাত সেলের ব্যবসায়ীদের। চৈত্র সেলের জন্য অনেকে প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করে পোশাক কিনেছিলেন। সেই সব পোশাক এখন বস্তাবন্দি অবস্থায় ডাঁই হয়ে পড়ে রয়েছে, বহু পোশাক নষ্ট হওয়ায় জোগাড়। কী করে এই লোকসান সামলাবেন ? বুঝে উঠতে পারছেন না ছোট ব্যবসায়ীদের অনেকেই।
