লাইনেরই একদম পিছনের সারিতে পলিথিনের ব্যাগে কয়েকটা ফুল হাতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন জয়নগর থেকে আসা তরুণী দীপালি দাস। লাইন তখন মৌলালির কাছে। শেষ পর্যন্ত এই ফুল দেওয়া যাবে কিনা সেই দুশ্চিন্তা চোখেমুখে। এরই মধ্যে চলছে মেঘবৃষ্টির খেলা। ফিরতি পথে যাকেই দেখছেন জিজ্ঞেস করে চলেছেন আর কতক্ষণ দেহ থাকবে। লাইন দ্রুত এগোচ্ছে না কেনও? ইত্যাদি।
advertisement
আরও পড়ুন: আরজি কর কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি রুখতে বড় দাবি অভিষেকের, কী বললেন তৃণমূল সাংসদ?
দিপালী দাস বলেন, “গতকাল খবরটা পাওয়ার পর থেকেই মনখারাপ। শেষবার অন্তত একবার বুদ্ধবাবুকে দেখতে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। তারপর থেকেই মনে মনে ঠিক করে ফেলি বাজার থেকে ফুল কিনে নয় আমার বাগানের প্রিয় ফুলটাই বুদ্ধবাবুর পায় অর্পণ করবো। সকালবেলায় সেইমতো বাগানে গিয়ে কয়েকটা ফুল তুলে নিয়ে আসি। কিন্তু আসতে বেশ খানিকটা দেরি হয়ে গেল। আসার পর আবার দেখতে পাচ্ছি এত লম্বা লাইন। তবে যত সময়ই দাঁড়াতে হয় হোক আপত্তি নেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শ্রদ্ধা জানাতে কাছে যাওয়া যাবে কি না সেটাই প্রশ্ন। কারণ নির্দিষ্ট সময়ের পরেই তো হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর দেহ। তবে আমি আশাবাদী যে ঠিক এই ফুল বুদ্ধবাবুর পায়ে অর্পন করতে পারব।”
আরও পড়ুন: আরজি কর কাণ্ডে পড়ুয়াদের সমস্ত দাবি দাবি মেনে নিল স্বাস্থ্য দফতর, কী কী পদক্ষেপ?
মুজাফফর আহমেদ ভবন। সিপিএমের রাজ্য দফতর। এখান থেকেই কাজ করতেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। নিয়মিত যাতায়াত ছিল তাঁর এই বাড়িতেই। অসুস্থ হওয়ার পরেও কিছুদিন এসেছিলেন তিনি। তারপর একটা বিরাট সময়ের ব্যাবধান। শুক্রবার তাঁর দেহ শেষবারের মতো নিয়ে আসা হলো দীর্ঘদিনের তাঁর কর্মস্থলে।
এদিকে সময় যত এগিয়েছে কপালের ভাঁজ তত চওড়া হয়েছে সিপিএম নেতৃত্বের। বিকেল চারটের মধ্যে এনআরএসে দেহ দান করার কথা। তার আগে দীনেশ মজুমদার ভবনে কিছুক্ষণের জন্য দেহ রাখা হবে। এদিকে বাইরে তখন দাঁড়িয়ে হাজার হাজার জনতা। বেশ কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর অনেকেরই ধৈর্যচ্যুতি হয়েছে। এদিকে দ্রুত শ্রদ্ধা জানিয়ে পরেরজন কে সুযোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়ে চলেছেন নেতৃত্ব। একটা সময়ে আলিমুদ্দিনের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। একটা সময়ে মাইকে ঘোষণা করা হয় যেহেতু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হাসপাতালে দেহ দান করতে হবে তাই আর কাউকে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া যাবে না।
বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ভিড়ের একটা অংশ। এরপরেই রাশ ধরেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সকলকেই শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ করে দেন তিনি। আর এই সুযোগেই প্রত্যেকে শেষ বারের মতো প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পেরেছেন। খালি হাতে ফিরে যেতে হয়নি দীপালি দাসের মতো অনেককেই।