বিরোধী দলনেতা জানান, বিজেপি সরকার গঠনের পর বাংলাতেও প্রকাশিত হবে ‘সংকল্প পত্র’। সেই সংকল্প পত্র হাতে নিয়ে তাঁরা যাবেন সাধারণ মানুষের দুয়ারে দুয়ারে। শুভেন্দু বলেন, দিল্লিতে যেমন ‘সংকল্প পত্র’ প্রকাশ করা হয়েছিল, এবার বাংলার জন্যও সেই নথি প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেন, “মহিলাদের জন্য মাসে আড়াই হাজার টাকা, ৫০০ টাকায় গ্যাস, সরকারি বাসে ফ্রি যাতায়াত, আর আয়ুষ্মান ভারতে ১০ লক্ষ টাকার চিকিৎসা — এই চারটি আমাদের প্রধান প্রতিশ্রুতি।”
advertisement
১৮ মাস আগে সমাহিত শিশুর দেহ তোলা হচ্ছে মাটি খুঁড়ে! হবে ময়নাতদন্ত, অভিযোগের আঙুল বাবার দিকে!
তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য বিজেপির এই ঘোষণাকে ‘ভোটের আগে খয়রাতির রাজনীতি’ বলে কটাক্ষ করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “এরা ভোটের আগে অনেক কিছু বলে, কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে কিছুই দেয় না। মুম্বই, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানে যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিছুই পূরণ করেনি। আমরা যা বলি, তাই করি। আমরা কখনও কথার খেলাপ করি না।” মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “লক্ষ্মীর ভাণ্ডার আমরা শুধু বাংলায় নয়, সারা পৃথিবীতে প্রথম চালু করেছি। আর এটা সারাজীবন চলবে।”
তবে শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, “সব দলই খয়রাতির রাজনীতি করে, কিন্তু নিজেরা দিলে বলে কল্যাণ, আর বিরোধী দিলে বলে খয়রাতি — এটাই রাজনীতির প্রহসন।” তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, ছত্তীসগঢ়ে মাহাতারি যোজনায় মহিলারা বছরে বারো হাজার টাকা পান, ওড়িশায় সুভদ্রা যোজনায় মহিলাদের এককালীন পঞ্চাশ হাজার টাকা দেওয়া হয়, মধ্যপ্রদেশে ‘লাডলি বহেন’ প্রকল্পে মহিলারা মাসে আড়াই হাজার টাকা পান, তাহলে বাংলার মহিলারা বঞ্চিত কেন?
শুভেন্দু আরও দাবি করেন, “মাধ্যমিক পাশ বেকার যুবক যতদিন চাকরি না পাচ্ছেন, মহারাষ্ট্রে দেবেন্দ্র ফডণবীশের নেতৃত্বে এনডিএ সরকার প্রতি মাসে চার হাজার টাকা বেকার ভাতা দিচ্ছে। তাহলে পশ্চিমবঙ্গেই বা হবে না কেন?”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তৃণমূল সরকার লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, স্বাস্থ্যসাথীর মতো প্রকল্পের হাত ধরে রাজ্যে একাধিক নির্বাচনে ঢালাও সাফল্য পেয়েছে। বিজেপি এবার সেই ‘সফল ফর্মুলা’-র প্রতিরূপ তৈরি করে পাল্টা প্রতিশ্রুতির রাজনীতি শুরু করেছে।
অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন, “কেউ কেউ এখন থেকে বলছে এত দেব, ওত দেব। কিন্তু নির্বাচনের আগে যা বলেছিল, দেয়নি। আমরা কখনও ফাঁকা প্রতিশ্রুতি দিই না। আমরা যা বলি, তা রাখি।”
তৃণমূলের বক্তব্য, “স্বাস্থ্যসাথীতে প্রতি পরিবারে বছরে পাঁচ লক্ষ টাকার চিকিৎসা বিমা দিচ্ছে রাজ্য সরকার। সেখানে আয়ুষ্মান ভারতে কেন্দ্রের ভূমিকা মাত্র ষাট শতাংশ। রাজ্যের মানুষকে চব্বিশ ঘণ্টা স্বাস্থ্যসাথী সুবিধা দিতে রাজ্যই পুরো দায় নিয়েছে।”
অন্যদিকে বিজেপি দাবি করছে, রাজ্যে ক্ষমতায় এলে আয়ুষ্মান ভারতে দ্বিগুণ অর্থাৎ দশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসার সুবিধা দেওয়া হবে।
ভোটের আগে তাই রাজনীতির ময়দানে মূল প্রতিযোগিতা এখন প্রতিশ্রুতি বনাম প্রতিশ্রুতি। একদিকে তৃণমূলের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী ও স্বাস্থ্যসাথী— অন্যদিকে বিজেপির ‘আড়াই হাজারি’ ও ‘আয়ুষ্মান দশ লক্ষ’। ভোটের আগে রাজনীতি এখন স্পষ্টতই খয়রাতির পাল্টা খয়রাতির লড়াইয়ে দাঁড়িয়েছে।