#কলকাতা: টিম স্টোন বাগ নামের একজন আমেরিকান পরিচালকের একটি ডকুমেন্টারিতে নায়কের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন এক দশকেরও আগে।তাঁকে নিয়ে নানান আন্তর্জাতিক পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হয়েছিল। তিনি কলকাতার বায়োস্কোপওয়ালা মহম্মদ সেলিম।
কিন্তু সময় বদলে গিয়েছে। এখনকার মানুষ টাকার বিনিময় প্রজেক্টরে সিনেমা দেখার পক্ষপাতী নয়। বর্তমান প্রজন্ম ডিজিটাল মাধ্যমে সিনেমা দেখতেই বেশি স্বচ্ছন্দ্য। কিন্তু কিছু বছর আগেও এমনটা ছিল না ৷ হলে গিয়ে সিনেমা দেখতেই বেশি মজা পেতেন সিনেপ্রেমীরা। ৪৫ বছর ধরে প্রজেক্টরে সিনেমা দেখিয়ে চলা এই মানুষটির এখন সংসার চালানোই ক্রমে অসম্ভব হয়ে পড়ছে।
advertisement
এক সময় এই প্রজেক্টরটির মাধ্যমে অনেক সিনেমা দেখানো হয়েছে। কিন্তু মোবাইল আসার পর থেকে মানুষের কাছে সিনেমা সহজেই পৌঁছে যাচ্ছে। রাস্তায় ঘুরে ঘুরে তাই এই বায়োস্কোপওয়ালার সিনেমা দেখানোর সুযোগ কমে এসেছে। প্রজেক্টরটি তাঁর কাছে অত্যন্ত প্রিয় ৷ তাই ৫ লক্ষ টাকাতেও তিনি তা বিক্রি করেননি। ভালোবাসা থেকেই তিনি এই পেশা বেছে নিয়েছিলেন। এই যন্ত্রটিতে তিনি স্ট্রিট সিনেমার আর্ট-কে সংরক্ষিত করে যেতে চান। এ সময় যদি কোনও ছেলেমেয়ে এসে তাঁর সামনে দাঁড়ায়, সেলিমের বুক ভরে ওঠে। এই বুঝি পুরনো দিনের মতো কেউ বায়োস্কোপওয়ালার কাছে সিনেমা দেখতে চাইবে ৷ কিন্তু তার সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়। এইভাবে সিনেমা দেখা এখনকার বাচ্চারা স্বপ্নেও ভাবতে পারে না।
চার ছেলে, দুই মেয়ে এবং স্বামী-স্ত্রী নিয়ে মহম্মদ সেলিমের সংসার ৷ কলকাতার বায়োস্কোপওয়ালাদের মধ্যে অন্যতম সেলিমের পক্ষে এখন বায়োস্কোপ দেখিয়ে উপার্জন করা আর সম্ভব হচ্ছে না। মহম্মদ সেলিম জানালেন, "দুর্গাপুজো, রথযাত্রা, ঈদ,কালীপুজোর মতো উৎসব ছাড়া সারা বছর আর ব্যবসায় কোনও আয় নেই। এমনকী, আমার নিজের সন্তান ও নাতি-নাতনিরাও তাদের স্মার্টফোনে সিনেমা দেখে। এটা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক।"
জীবনের শেষ ভাগে এসে এমন দিন আসবে তিনি বোধ হয় স্বপ্নেও ভাবেননি। সিনেমা দেখিয়ে বা সিনেমাকে সংগ্রহ করে যে মানুষটি তাঁর জীবন চালাতেন ৷ তাঁকে ভাল রাখার দায়িত্ব কি সমাজের এতটুকুও নেই?
