সমন পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই লালবাজারে হাজির হলেন খানাকুলের তৃণমূল বিধায়ক ও কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র ইকবাল আহমেদ ৷ কিন্তু হাজিরার আগে ইটিভি নিউজ বাংলার প্রতিনিধির কাছে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন তৃণমূলের দাপুটে এই নেতা ৷ লালবাজারে যাওয়ার আগে দলের মধ্যে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ তুললেন তিনি। বললেন, দলের কারও বিশ্বাসঘাতকতার জন্যই বিপাকে পড়েছেন তিনি ৷ একইসঙ্গে জানালেন, কিভাবে ম্যাথু স্যামুয়েলের সঙ্গে তাঁর পরিচয় এবং কী কথা হয় তাদের মধ্যে সমস্ত কিছু তিনি পুলিশকে বিস্তারিত বলবেন ৷
advertisement
৫২ ঘণ্টার নারদ স্টিং ফুটেজে খানাকুলের তৃণমূল বিধায়ককে টাকা নিতে দেখা যায় ৷ সেই ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তৃণমূল সাংসদ সুলতান আহমেদের ছোট ভাই ইকবালকে লালবাজারে ডেকে পাঠিয়েছে নারদকাণ্ডের জন্য গঠিত SIT ৷
গত সপ্তাহে নারদকাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হয় IPS মির্জাকে ৷ লালবাজারে দু’দিন ধরে প্রায় ঘণ্টা ছ’য়েক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাকে। রেকর্ড করা হয় তাঁর বয়ান এবং ভিডিও রেকর্ডিং করে রাখা হয় এই গোটা জিজ্ঞাসাবাদ প্রক্রিয়া ।
রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের মুখে প্রকাশিত হওয়া নারদ ভিডিও ক্লিপ রাজনৈতিক মহলে বিতর্কের ঢেউ তোলে ৷ ভিডিও ক্লিপটিতে তৃণমূলের ১১ জন শীর্ষ নেতা- নেত্রীদের লক্ষ লক্ষ টাকা নিতে দেখা যায় ৷ এই ক্লিপ নিয়েই ভোটের আগে তৈরি হয় প্রবল বিতর্ক ৷ শাসক দলের বিরুদ্ধে একযোগে আক্রমণ শানান বিরোধীরা ৷
দক্ষিণের সংবাদ সংস্থা নারদ ডট কম দাবি করেন, এই ভিডিও একদম খাঁটি ৷ ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে এই স্টিং অপারেশনটি তারা করেছিলেন বলে দাবি করেন সংস্থার কর্ণধার ম্যাথু স্যামুয়েল ৷
গত ১৭ জুন নবান্নে বিশেষ বৈঠকের পর কলকাতা পুলিশের হাতে নারদ স্টিং কাণ্ডের তদন্তভার তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার পর থেকেই তৎপরতার সঙ্গে তদন্তে নেমে পড়ে কলকাতা পুলিশ ৷ তদন্তের জন্য সিপি রাজীব কুমারের নেতৃত্বে SIT গঠন করে কলকাতা পুলিশ ৷ এছাড়া টিমে রয়েছেন জয়েন্ট সিপি (ক্রাইম) বিশাল গর্গ, কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইমের ওসি এবং ইকনমিক অফেন্স উইং শাখার ওসি-সহ কয়েকজন কর্তা ৷
মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশের ৪৮ ঘণ্টা পেরোতে না পেরোতেই নারদ ডট কমের কর্ণধার ম্যাথু স্যামুয়েলের বিরুদ্ধে FIR দায়ের করে নিউমার্কেট থানার পুলিশ ৷ মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে নারদ নিউজের CEO ম্যাথু স্যামুয়েলের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে কলকাতা পুলিশ ৷
অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র থেকে জালিয়াতি, সম্মানহানির মতো একাধিক ধারায় নারদ ডট কমের কর্ণধারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে ৷ ম্যাথু স্যামুয়েলের বিরুদ্ধে ৪৬৯ ধারায় সম্মানহানির উদ্দেশ্যে জালিয়াতি, ৫০০ ধারায় মানহানি, ৫০৫(১)(বি) ধারায় জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ,১৭১(জি) ধারায় নির্বাচনের প্রার্থীর বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত কুৎসা ছড়ানো, ১২০(বি) ধারায় অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয় ৷
অন্যদিকে, হাইকোর্টে ফরেন্সিক রিপোর্টে নারদ স্টিংয়ের ফুটেজের সত্যতা প্রমাণিত না হওয়ায় ফুটেজ নিয়ে এখনও প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে ৷ নারদ ডট কমের দেখানো সমস্ত ফুটেজ আসল না তাতে কোনও কারিকুরি করা হয়েছে, তা নিয়ে কোনও স্পষ্ট কোনও রিপোর্ট দিতে পারেনি হায়দরাবাদ সিএফএসএল ৷ হায়দরাবাদ ল্যাবে ফুটেজ পরীক্ষার পরিকাঠামো না থাকায় আরও ফুটেজের আরও পরীক্ষার জন্য চণ্ডীগড় CFSL-এর কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৷
হায়দরাবাদ সিএফএসএল রিপোর্টে জানিয়েছে, প্রথমে আই ফোনে সমস্ত ছবি তোলা হয়েছে ৷ পরে সেই ছবি ম্যাথু স্যামুয়েলের ল্যাপটপে ট্রান্সফার করা হয় ৷ এই ট্রান্সফারের সময় কোনওরকম ডিজিটাল কারিকুরি করা হয়েছে কিনা তা জানতে ল্যাপটপের হার্ড ডিস্ক পরীক্ষা করা জরুরি ৷ সেকারণেই সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি ল্যাব ৷ একইসঙ্গে তাঁরা ফুটেজের আরও পরীক্ষার জন্য চণ্ডীগড়ের ল্যাবে পাঠানোর পরামর্শ দেয় ৷ প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর সেই অনুযায়ী ভিডিও ফুটেজ চণ্ডীগড় ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছে ৷
ভিডিওতে সাংসদদের টাকা নেওয়ার দৃশ্য দেখে লোকসভা এথিক্স কমিটিও নারদকাণ্ডের তদন্তের জন্য আলাদা এথিক্স কমিটি গঠন করেছে ৷