তৃণমূল ভবনে এসে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূলে যোগ দিলেন কংগ্রেস নেতা মহম্মদ সোহরাব, অসিত মজুমদার, অজয় ঘোষ,মনোজ পাণ্ডে ও খালেক ইবাদুল্লা ৷
বিধানসভা ভোটের পর থেকেই কংগ্রেসের রক্তক্ষরণ অব্যাহত ৷ জেলায় জেলায় একে একে নিভছে কংগ্রেসের দেউটি ৷ দলের মধ্যে ভাঙন তো বহুদিন ধরেই প্রকাশ্যে ৷ এবার মানস ভুঁইয়ার মতো প্রবীণ নেতা ও পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদের দলত্যাগ আরও দুর্বল করে দিল সংগঠনকে ৷ বিধানসভায় PAC চেয়ারম্যানের প্রস্তাব গ্রহণের পর থেকে কংগ্রেসের সঙ্গে আরও প্রকট হয়েছে দূরত্ব ৷ দলনেতা আবদুল মান্নান ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর উদ্দেশ্যে প্রকাশ্যে বাগবিতন্ডা, দ্বন্দ্ব, বিষোদগারের খবর পৌঁছেছে দিল্লি পর্যন্ত ৷ দলীয় নিয়মলঙ্ঘনের দাবী তুলে মানস ভুঁইয়াকে সাসপেন্ড করারই সুপারিশ করেছে কংগ্রেস পরিষদীয় দল। সেই সিদ্ধান্ত আসার আগেই মানসের দলত্যাগ ৷
advertisement
ইঙ্গিত বহু আগে থেকেই দিয়েছিলেন ৷ আজ রাজনৈতিক মহলে হাওয়ায় ভেসে বেড়ানো কথাকে সত্যি করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলে যোগ দিলেন মানস ভুঁইয়া ৷ এদিন সাংবাদিক বৈঠকে মানস বলেন, ‘উন্নয়ন দেখেই তৃণমূলে যোগ দিলাম ৷ আমার মন বিবেক সবই তৃণমূলের ৷ আমি মাসে চার বার হাই কমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করতাম ৷ মাঝখানে কালো পাহাড় ছিল সিপি জোশী ৷ তিনিই পথের কাঁটা, আমি আসল কংগ্রেসের ঠিক জায়গা নিলাম ৷’
নির্বাচনের একদিন আগে সবংয়ের জয়দেব সাহা নামে এক তৃণমূল কর্মী খুনে জড়িয়েছিল মানসের নাম ৷ সে সম্পর্কে এদিন প্রশ্ন করা হলে সবংয়ের বিধায়ক বলেন, ‘আইন আইনের পথে চলবে ৷ এই নিয়ে পৃথক কোনও বক্তব্য রাখব না ৷ বিরোধিতা মানে প্রতিহিংসা নয় ৷ আমি এখন তৃণমূল কর্মী ৷ রাজনীতিতে প্রতিহিংসা থাকে না ৷’
দলের নির্দেশ না মেনে পিএসি চেয়ারম্যানের পদ নেওয়ায় প্রদেশ নেতৃত্বের রোষের মুখে পড়েছিলেন। অধীর চৌধুরী-আব্দুল মান্নানদের সঙ্গে বিবাদেও পাশে দাঁড়ায়নি হাইকমান্ড। আক্ষরিক অর্থেই প্রদেশ কংগ্রেসে কোণঠাসা ছিলেন মানস ভুঁইয়া। তাই গ্রেফতারি এড়ানো এবং রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ বাঁচাতে তৃণমূলে তাঁর যোগদান ছিল স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।
শুধু মানসই নন, এদিন তৃণমূলে যোগ দেন একাধিক কংগ্রেস নেতা ৷ জোড়াফুলে যোগ দিয়ে মহম্মদ সোহরাব বলেন, ‘ সিপিআইএম দিকে গিয়ে কংগ্রেস আদর্শ হারিয়েছে ৷ মমতার আদর্শের সঙ্গে আমার আদর্শের মিল আছে ৷ তাই তৃণমূলে যোগ দিলাম ৷’
এদিন মানসেই পথেই কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন মহম্মদ সোহরাব, অসিত মজুমদার, অজয় ঘোষরা। যা দেখে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, এরপর কি আদৌ কোনও অস্বিত্ব থাকল প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির?
মানস সহ বাকি কংগ্রেস নেতাদের তৃণমূলে অর্ভ্যথনা জানিয়ে মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘অবশেষে প্রতিক্ষার অবসান ৷ আজ একটি স্মরণীয় দিন ৷ প্রদেশ কংগ্রেসের বড়সড় ভাঙন ৷ পড়ে রইলেন আর ২ জনই ৷ বিধানসভায় কংগ্রেসের কাউকে খুঁজে পাব না ৷ আদর্শহীন কংগ্রেস, আজ তা আরও প্রমাণ হল ৷ আমরা মানুষের সঙ্গে আছি ও থাকব ৷’
তৃণমূলে আনুষ্ঠানিকভাবে পা রাখার কিছুক্ষণের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে সস্ত্রীক নবান্নে পৌঁছন মানস ভুঁইয়া।