এদিন মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে নারদ নিউজের CEO ম্যাথু স্যামুয়েলের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে কলকাতা পুলিশ ৷ অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র থেকে জালিয়াতি, সম্মানহানির মতো একাধিক ধারায় নারদ ডট কমের কর্ণধারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে ৷ সূত্রের খবর, ম্যাথু স্যামুয়েলের বিরুদ্ধে ৪৬৯, ৫০০, ৫০৫(১)(বি) ,১৭১(জি), ১২০(বি) ধারাতে মামলা দায়ের করা হয়েছে ৷
advertisement
অন্যদিকে, নারদ স্টিং অপারেশন কাণ্ডের তদন্তের জন্য SIT গড়তে চলেছে কলকাতা পুলিশ ৷ পুলিশ সূত্রে খবর, SIT-এর প্রধান হিসেবে থাকবেন সিপি রাজীব কুমার ৷ এছাড়া টিমে থাকবেন জয়েন্ট সিপি (ক্রাইম) বিশাল গর্গ, কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইমের ওসি এবং ইকনমিক অফেন্স উইং শাখার ওসি-সহ কয়েকজন কর্তা ৷ আজ থেকেই স্টিং ফুটেজের পরীক্ষা করা শুরু হবে ৷
ভোট শেষ, নির্বাচনী লড়াইয়ে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। ভোটে জিতলেও নারদ কান্ডে দাঁড়ি টানতে নারাজ মুখ্যমন্ত্রী। বরং নারদাকাণ্ডের পিছনে চক্রান্তের জাল ছিঁড়তে ঝাঁপাবে রাজ্য সরকার। শনিবার নেতাজি ইন্ডোরের কর্মীসভায়ও তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিধানসভা নির্বাচনে অন্যতম ইস্যু হয়ে উঠেছিল নারদাকাণ্ড। নারদার স্ট্রিং অপারেশনের সত্যতা জানতে হাইকোর্টে মামলাও হয়। বিরোধীরা গলা ফাটালেও ভোটের বাক্সে অবশ্য নারদাকাণ্ডের প্রভাব পড়েনি। তৃণমূলের বিরুদ্ধে চক্রান্তেই যে নারদাকাণ্ডের ছক কষা হয়, তা নিয়ে ভোটের পরও সরব হয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
নারদার স্ট্রিং অপারেশনে একাধিক একাধিক তৃণমূল নেতাকে টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা, তৃণমূল কখনও এধরনের কাজে জড়িত ছিল না, থাকবেও না।
ভোট চলাকালীনই মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী জানিয়েছিলেন, ঘটনার তদন্ত করে দেখা হবে আসল ঘটনা কী? ভিডিওতে দেখানো দৃশ্যগুলি কতটা সত্যি তাও দেখা হবে ৷ নারদা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে হাওড়ার নির্বাচনী জনসভায় নেত্রী বলেছিলেন, ‘যদি কেউ টাকা নিয়ে থাকে তাহলে সে চোর, দল নয় ৷’ আসল ঘটনার তদন্ত করে দেখার প্রতিশ্রুতি তখনই দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
নারদার চক্রান্তের পিছনে কারা, কার টাকায় স্ট্রিং অপারেশন হয়, তদন্তে সবটাই স্পষ্ট হবে বলে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ভোট মিটলেও নারদাকাণ্ডে এবার পাল্টা চাপের রাস্তায় হাঁটতে চলেছে তৃণমূল সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর কথাতেই তা স্পষ্ট।
ভিডিও ক্লিপের ফরেনসিক রিপোর্ট এসে গিয়েছে ৷ লোকসভায় নীতি কমিটির কাছেও পৌঁছেছে নারদকাণ্ড ৷ অভিযুক্ত সাংসদদের কাছে পৌঁছে গিয়েছে চিঠি ৷ তাই তদন্তের ফল যাই বেরোক তার আঁচ আর সরকার বা দলের গায়ে পড়বে না বলেই মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল ৷
যদিও এই পদক্ষেপ প্রশাসক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইমেজের পক্ষে অবশ্যই ইতিবাচক ৷ অন্যদিকে, দলনেত্রী হিসেবে দলের গা থেকে কলঙ্ক মুছে ফেলার ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে অভিমত রাজনীতিবিদদের ৷ আদালত নারদ কাণ্ডের তদন্তভার কার হাতে দেবে সেই প্রশ্নের উত্তর জানতে এখনও অপেক্ষা করতে হবে ৷ কিন্তু তার আগেই কলকাতা পুলিশের হাতে মুখ্যমন্ত্রীর তদন্তভার তুলে দেওয়ার এই কৌশলকে তারিফ করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা ৷
গত মার্চ ১৪, নির্বাচনের প্রথম দফার বিজ্ঞপ্তি জারির দিন বিজেপি পার্টি অফিসে শাসক দল তৃণমূলের ১১ জন শীর্ষ নেতা- নেত্রীদের ঘুষ নেওয়ার বিস্ফোরক ক্লিপটি দেখানোর পর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহল ৷ এই ক্লিপ নিয়েই ভোটের আগে তৈরি হয় প্রবল বিতর্ক ৷ শাসক দলের বিরুদ্ধে একযোগে আক্রমণ শানান বিরোধীরা ৷
দক্ষিণের সংবাদ সংস্থা নারদ ডট কম দাবি করেন, এই ভিডিও একদম খাঁটি ৷ ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে এই স্টিং অপারেশনটি তারা করেছিলেন বলে দাবি করেন সংস্থার কর্ণধার ম্যাথু স্যামুয়েল ৷
শুক্রবার বিশেষ বৈঠকের পর নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নারদা নিয়ে তদন্ত হবে ৷ আমরা চাই সত্য সামনে আসুক ৷ জানতে চাই স্টিংকাণ্ডের পেছনে কারা আছেন ৷’ একই সঙ্গে তিনি জানান, ‘কেউ যদি সত্যি দোষী হন, তিনি অবশ্যই শাস্তি পাবেন ৷ স্টিংকাণ্ডের পেছনে কোনও চক্রান্ত আছে কিনা, কারা এই চক্রান্তের পেছনে আছে, আগে সেটা জানতে হবে ৷ এখনও বিশ্বাস করি পুরোটাই চক্রান্ত ছিল ৷ কোনও প্ররোচনা ছিল ৷ আমি চাই সত্যটা সামনে আসুক ৷ সব পরিষ্কার হোক ৷’
নারদ স্টিং কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত দাবি করে ইতিমধ্যেই তিনটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয় হাইকোর্টে। তিনটি মামলারই একসঙ্গে শুনানি চলছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে। সেই মামলাতেই ১২ এপ্রিল অরিজিনাল ফুটেজ ও ক্যামেরা সংগ্রহে রাজ্য সরকার, সিবিআই ও হাইকোর্টের অফিসারকে নিয়ে কমিটি গঠন করে উচ্চ আদালত। কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করে হাইকোর্ট। কমিটিতে আছেন রাজ্য পুলিশ রিক্রুটমেন্ট সেলের আইজি অনিল কুমার, সিবিআই-এর দুর্নীতি দমন ব্যুরোর পুলিশ সুপার নগেন্দ্র প্রসাদ এবং হাইকোর্টের অরিজিনাল সাইড রেজিস্ট্রার জয়ন্ত কোলে ৷