রেল দুর্ঘটনা হওয়ার পর ওড়িশায় যাওয়া যাত্রীদের চাপ বাড়তে থাকে বাসের উপর। চাহিদা অনুযায়ী লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছিল ভাড়া। কলকাতা থেকে দাঁড়িয়ে যাওয়ার ভাড়া গুনতে ছিল ৫০০ থেকে ৭৫০ টাকা। সিট বা স্লিপিংয়ের জন্যও দুই-তিন গুণ ভাড়া বৃদ্ধি হয়েছিল। এর ফলে যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ওড়িশা থেকে কলকাতায় আসার সময় যাত্রীরা কার্যত বিনামূল্যেই এসেছিলেন।
advertisement
কীভাবে? আসলে যাত্রীদের সিংহভাগই ছিলেন দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের। করমণ্ডল, যশবন্তপুর-সহ বেশ কিছু ট্রেনের যাত্রীরা যখন কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন, তখন তাদের কাছে কার্যত কোনও টাকা-পয়সাই ছিল না। তবুও সেই বাসে করে তারা ফিরতে পেরেছেন একদমই বিনামূল্যেই। শনিবার সকালে ওড়িশা থেকে বাসগুলো এসে পৌঁছয় কলকাতার বাবুঘাটে। বেশিরভাগ যাত্রী জানিয়েছেন তাদের কাছ থেকে কোনও টাকা পয়সা নেওয়া হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাস কর্মী বলেন, ‘‘মানবতার খাতিরে যাত্রীদের কাছ থেকে কোনও টাকা পয়সা চাওয়া হয়নি। যে মানুষগুলো একেবারেই নিঃস্ব হয়ে গিয়েছে ট্রেন দুর্ঘটনার জন্য। তাঁরা কোথা থেকে টাকা পয়সা দেবে। আমরা তাঁদের কাছ থেকে কোনও পয়সা কড়ি চাইনি। শুধুমাত্র যারা ওই ট্রেনের যাত্রী ছিলেন না তাঁদের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া হয়েছে। তবে সেই সংখ্যাটা ছিল খুবই কম। আমরা বিপদে পড়া মানুষদেরই সাহায্য করতে চেয়েছিলাম। তবে দুর্ঘটনাগ্রস্ত সেই ট্রেনের যাত্রীদের মধ্যেও কেউ আংশিক, কেউ সম্পুর্ণ ভাড়া স্বেচ্ছায় দিয়েছেন।’’
বাসে করে এক আসা যাত্রী সুকান্ত হালদার বলেন, ‘‘ট্রেনে দুর্ঘটনার পর সবকিছু খোয়া গিয়েছে। টাকা পয়সা ব্যাগ সবই গেছে। এমনকী, বাড়িতে খবর দেওয়ার মতন ফোনটাও ছিল না। কোনওক্রমে জীবনটা নিয়ে একদিকে হাঁটতে থাকি দিশাহীন ভাবে। রাস্তায় উঠতেই এই বাসগুলি নজরে পড়ে। আমার মতন আরও অনেক যাত্রী একই রকম ভাবে এই বাসের কাছে এসে পৌঁছয়। আমাদেরকে ভুবনেশ্বর থেকে কলকাতায় নিয়ে আসে তাঁরাই। কোনওরকম ভাবে ভাড়া চাওয়া হয়নি আমাদের কাছ থেকে। কৃতজ্ঞতা জানানোর কোনও ভাষা নেই।”
