নিরাপত্তার ক্রস প্যাসেজেই মরণফাঁদ। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর জোড়া সুড়ঙ্গের কোনও একটায় কোনও রকম বিপত্তি ঘটলে যাত্রীদের যাতে দ্রুত বার করে আনা সম্ভব হয়, তার জন্য দুই সুড়ঙ্গের মধ্যে এমন ক্রস প্যাসেজের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এসপ্ল্যানেড থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত মোট আটটি এমন প্যাসেজের মধ্যে তিনটি প্যাসেজ তৈরিতেই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি ছিল। তা নিয়ে সবচেয়ে চিন্তায় ছিলেন কেএমআরসিএল-এর প্রযুক্তিবিদরা।
advertisement
আরও পড়ুন: মাটি শক্ত করা গিয়েছে, তবু বউবাজারের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম আশঙ্কা
শিয়ালদহের দিক থেকে এগোলে সিপি-ওয়ান তৈরির কথা ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে, মদন দত্ত লেনের নীচে সিপি-টু তৈরি করতে গিয়েই বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। সিপি-থ্রি তৈরি করার কথা হিন্দ সিনেমার কাছে ভূগর্ভে। কেএমআরসিএল-এর প্রযুক্তিবিদদের কয়েকজন জানাচ্ছেন, ওয়েলিংটন স্কোয়্যার থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত অংশে ভূগর্ভস্থ মাটির অবস্থা খুব সুবিধার নয়। খুব অল্প জায়গার মধ্যে নানা ধরনের মাটি এই অঞ্চলে মিশে রয়েছে। এর মধ্যে বেলেমাটির পরিমাণই সর্বাধিক। মাত্র দেড় মিটার বা সাড়ে চার ফুট খুঁড়লেই বেরিয়ে আসে ভূগর্ভস্থ জলের স্তর।
আরও পড়ুন: 'সব অভিযোগ মিথ্যা', তথ্য সামনে এনে বউবাজার নিয়ে KMRCL-এর পাল্টা বিস্ফোরক দাবি
এছাড়াও গোটা এলাকায় মাটির নীচে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য ওয়াটার পকেট। এর মধ্যেই বউবাজার দুর্গা পিতুরি লেন এবং সংলগ্ন এলাকা নিয়ে কিছুটা নিশ্চিন্তেই ছিলেন কেএমআরসিএল প্রযুক্তিবিদের দল।
২০১৯-এর ধসের পর থেকে এই এলাকায় মাটির নীচে প্রচুর পরিমাণে কংক্রিট ঢালা হয়েছে। বিশেষ করে চলতি বছর ১১ মে বিপর্যয়ের পর থেকে এ পর্যন্ত গ্রাউটিং করার সময় প্রায় ৮০০ টন কংক্রিট ঢেলে মাটির স্তর মজবুত করার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু সেই চেষ্টা যে পুরোটাই জলে গিয়েছে সেটা ১৪ অক্টোবরের বিপর্যয়ে স্পষ্ট হল।
প্রযুক্তিবিদরা মনে করছেন ভূগর্ভে বেলেমাটির পরিমাণ খুব বেশি থাকার ফলেই কংক্রিট হিসাব মতো থিতু হতে পারেনি। তাহলে কি এই অংশে ক্রস প্যাসেজ তৈরির পরিকল্পনা বাতিল করে দিতে হবে? সেই সম্ভাবনা একেবারেই নস্যাৎ করে দিচ্ছেন প্রযুক্তিবিদরা। কারণ এসপ্ল্যানেডের দিকে শেষ সিপি-র পর প্রায় ৭৫০ মিটার সুড়ঙ্গপথে এগোলে তারপর শিয়ালদহ স্টেশন পাওয়া যাবে। এমন ঝুঁকি কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি কিছুতেই অনুমোদন করবে না। আর তা না পেলে মেট্রো চলাচল সম্ভব নয়।