মানিকতলা বাগমারি এলাকার বাসিন্দা পবন অগ্রহরী। ৪২ বছর বয়স। গত ১৬ সেপ্টেম্বর, বাড়িতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। বিছানা থেকে নামতেই পারছিলেন না। প্রচণ্ড পা ফুলে যায়। স্থানীয় চিকিৎসককে দেখানোর পর, রক্ত পরীক্ষা করলে দেখা যায় হিমোগ্লোবিন ৩ এর নীচে নেমে গিয়েছে।
এরপর সেদিন রাতেই তাকে শিয়ালদহ এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে করোনা পরীক্ষা হলে রিপোর্ট পজিটিভ হয়। নিয়ম অনুযায়ী, গত ১৮ সেপ্টেম্বর পবন অগ্রহরীকে কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। গ্রিন বিল্ডিং এর পাঁচ তলায় তাকে চিকিৎসাধীন রাখা হয়। ২৪ তারিখ অর্থাৎ গত বৃহস্পতিবার মেডিক্যাল কলেজ থেকে বাড়ির লোককে ফোন করে বলা হয় ওইদিন পবন বাবুকে ছুটি দেওয়া হবে। পবনবাবুর দাদা সেদিন বিকেল চারটা থেকে গ্রিন বিল্ডিং এর সামনে অপেক্ষা করছিলেন। এলাকা থেকে একটা অটো বহু কষ্ট করে ভাড়া করেন তিনি।
advertisement
হাসপাতাল কর্মী, ডাক্তার প্রত্যেককে জিজ্ঞেস করলে বলা হয়, কিছুক্ষণ বাদেই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হবে।এরপর সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ ওয়ার্ড মাস্টার অফিস থেকে রোগীর পরিবারকে জানানো হয় যে, রোগীকে অনেকক্ষণ আগেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স করে তিনি বেরিয়ে গিয়েছে।
মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে পবনবাবুর পরিবারের। ওঁর দাদা বারবার করে বাড়িতে ফোন করে জানতে চাযন, পবনবাবু বাড়িতে ফিরেছে কিনা। প্রত্যেকবারই একই উত্তর,পবন বাড়ি ফেরেননি।
এরপর বউবাজার থানার আউটপোস্টও নিখোঁজ ডায়েরি করতে যায় রোগীর পরিবার যদিও সেখানে কোন ডাইরি নেওয়া হয় না। এরপর খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে রাত সাড়ে নটা নাগাদ মানিক তলার মোড়ে রাস্তার ওপরে মুমূর্ষু অবস্থায় ভাইকে বসে থাকতে দেখেন দাদা সঞ্জয় অগ্রহরী।
পরিবারের প্রশ্ন, কী ভাবে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল করোনা আক্রান্ত রোগীকে এভাবে একা একা ছেড়ে দিল? আদৌ কি রোগী নিরাপত্তার দায়িত্ব নিচ্ছে হাসপাতাল?
রোগী পবন অগ্রহরী বলেন,' আমাকে হাসপাতাল কর্মীরা সই করিয়ে বললেন বাড়ি চলে যেতে। আমার কাছে কোন পয়সা ছিল না, ওই অবস্থাতেই আমি হাঁটতে হাঁটতে মেডিকেল কলেজ থেকে মানিকতলা পর্যন্ত যাই। এরপর আর শরীর দেয় না,ওখানে বসে পড়ি আমি। আমাকে কেউ জানায়নি যে আমার বাড়ির লোক এসেছে। করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পরেও আমার শরীর খুব ভাল ছিল না। তবুও বাড়ি যাওয়ার জন্য মন অস্থির হয়ে গিয়েছিল।'
দাদা সঞ্জয় অগ্রহরি জানান, "আমরা মেডিক্যাল কলেজ সুপারের কাছে এই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছি। এতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন কিভাবে হলো হাসপাতাল? আমার ভাইয়ের যদি রাস্তায় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেত,তাহলে তার জবাব কে দিত?"
অন্য দিকে যথারীতি কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে,তারা গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। কী ভাবে এ রকম একটি ঘটনা ঘটল! তা জানা হচ্ছে। যদি কোনও কর্মী এই ঘটনায় দায়ী হয়,তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।