বিশেষত ব্রেনের অস্ত্রোপচার করতে হলে এখানে অনেক প্রবীণ চিকিৎসকেরও এনেসথেসিয়া করতে গিয়ে হাত কাঁপে, সেখানে সংযুক্তা সব সময় এক বাক্যে রাজি হতেন। দীর্ঘ সাত বছর এই হাসপাতালে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে কাজ করার পর তিনি ব্যক্তিগতভাবে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এসে কাজ শুরু করলেও সেখানেও তার কাজের খুঁত কেউ বার করতে পারেনি।
advertisement
শুক্রবার রাজারহাট নিউটাউনে ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হয় সংযুক্তার। দ্রুত তাঁকে ইএম বাইপাসের পাশের অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা সমস্ত রকম প্রচেষ্টা চালানোর পরও রবিবার রাতে ব্রেন ডেথ হয়ে যায় প্রতিভাবান চিকিৎসক সংযুক্তা শ্যাম রায়ের। এরপরে শোকগ্রস্ত পরিবারকে কোন কিছু বোঝানোর প্রয়োজন পড়েনি, উল্টে তাঁর পরিবারের তরফ থেকেই চিকিৎসকদের বলা হয় যে, সংযুক্তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: সুকান্তকে পাশে বসিয়েই দলের জন্য 'অভিভাবক' চাইলেন দিলীপ! তুমুল শোরগোল বিজেপিতে
এরপরই হাসপাতালের তরফ থেকে যোগাযোগ করা হয় রোটো-র ( রিজিওনাল অর্গান এন্ড টিস্যু ট্রান্সপ্লান্ট অর্গানাইজেশন ) এর সঙ্গে। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা জানা যায়, ব্রেন ডেথ হয়ে যাওয়া সংযুক্তার লিভার, দুটি কিডনি এবং চোখ দান করার মতো পরিস্থিতিতে রয়েছে। এরপরই কোথায় কোথায় কার কোন অঙ্গ প্রয়োজন এবং তাঁর সঙ্গে ব্রেন ডেথ হয়ে যাওয়া সংযুক্তার অঙ্গের ম্যাচিং হচ্ছে কিনা সেটা খোঁজ শুরু করে রোটো।
মঙ্গলবার রাতেই ম্যাচিং গ্রহীতা পাওয়া যায়। বুধবার সকাল থেকেই শুরু হয়ে যায় তোড়জোড়। তরুণী চিকিৎসক সংযুক্তার লিভার পেতে চলেছে কলকাতারই বাসিন্দা ৬১ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ। অন্যদিকে একটি কিডনি পাবেন জামশেদপুরের বাসিন্দা ৩০ বছর বয়সী এক তরুণী। এই কিডনি প্রতিস্থাপন হবে দমদম আইএলএস হাসপাতালে। অন্যদিকে আরও একটি কিডনি এসএসকেএম হাসপাতালে ৪৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তির শরীরে প্রতিস্থাপিত করা হবে। চোখ বা কর্নিয়া যাবে দিশা আই হাসপাতালের আই ব্যাংকে।
আরও পড়ুন: বর্ষপূর্তিতে বড় লক্ষ্য তৃণমূলের, সব নজর নন্দীগ্রামে! বৃহস্পতিবার যা হতে চলেছে...
রাজ্যের সর্বস্তরের চিকিৎসকরা এই ঘটনাকে শুধুমাত্র কুর্নিশযোগ্য বলছেন না, একজন চিকিৎসক হিসেবে তাঁর পরিবার যেভাবে সচেতনতা আর বার্তা দিলেন তা সবার কাছেই উদাহরণযোগ্য বলে মনে করছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের পক্ষ থেকে চিকিৎসক কৌশিক চাকী বলেন, "এই মৃত্যু একদিকে যেমন অপূরণীয় ক্ষতি, সাত বছরের সন্তানকে রেখে চিকিৎসক মায়ের চলে যাওয়াকে আমরা কেউই মানতে পারছি না। তবু বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও আমাদের চিকিৎসকরা যেভাবে লড়াই চালিয়ে যান, তার এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ এই ঘটনা। আমাদের প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে। যেভাবে সংযুক্তার পরিবার তার অঙ্গ দান করল তা সত্যিই কুর্নিশ যোগ্য।"
অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিসেস ডক্টরস-এর পক্ষ থেকে চিকিৎসক মানস গুমটা জানান, "সংযুক্তার মতন মেধাবী চিকিৎসকের অকালে চলে যাওয়া সত্যিই দুঃখজনক। তবুও সেই অপরিসীম শোকের মধ্যেও তাঁর পরিবার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে আমাদের প্রত্যেকের মাথা নত হয়ে গিয়েছে। আশা রাখি আগামী দিনে আরও বহু মানুষ এই অঙ্গ দানে উদ্বুব্ধ হবেন।"