গত ৫ নভেম্বর থেকে ১৯ নভেম্বর ২০২৪ তারিখের সাম্প্রতিক তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে যে, হাওড়া আর কলকাতায় বায়ুদূষণের মাত্রা ক্রমাগত বেড়েছে। সময়ে সময়ে একিউআই বৃদ্ধি হয়েছে। এমন রেকর্ড দেখা যাচ্ছে। কিন্তু দিল্লির শোচনীয় অবস্থার তুলনায় তা অনেকটাই কম। কলকাতার একিউআই পৌঁছে গিয়েছিল ২২২। অর্থাৎ এটা ভেরি পুওর-এর তালিকায় পড়ছে। গত ১৪ এবং ১৫ নভেম্বর দীপাবলির উৎসবের পরে হাওড়ার সর্বোচ্চ একিউআই ২৯৩-এ গিয়ে পৌঁছেছিল। এদিকে দিল্লির একিউআই ৪০০ পার করে গিয়েছিল। এরপর গত কয়েকদিন ধরেই তা ৫০০ ছুঁইছুঁই। গত ১৮ নভেম্বর একিউআই পৌঁছে গিয়েছিল ৪৯৪-এ।
advertisement
কলকাতা এবং হাওড়ার বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে মূল যে দূষণকারী পদার্থগুলির মধ্যে অন্যতম হল পিএম ২.৫, পিএম ১০ এবং নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড। এর মধ্যে পিএম ২.৫ পলিউট্যান্টের ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করার ক্ষমতা রয়েছে। যা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জটিলতা বাড়িয়ে দেয়। আবার পিএম ১০ হল একটু কর্কশ প্রকৃতির পার্টিকেল। যা শ্বাসজনিত সমস্যার জন্য দায়ী। এছাড়া মাঝেমধ্যেই দেখা যায় নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইডও দূষণের জন্য দায়ী। যা বায়ুদূষণ অনেকাংশে বাড়িয়ে দিতে পারে।
আরও পড়ুন– প্রতিদিন স্টেশনে যেতেন যুবক, জিআরপি ধরতেই গোপন কথা ফাঁস! চাকরি গেল চার কনস্টেবলের
কলকাতা আর হাওড়ার মতো শহরে মূলত বায়ুদূষণের জন্য দায়ী গাড়ি থেকে নির্গত ধোঁয়া, নির্মাণকাজ এবং কলকারাখানা থেকে নির্গত ধোঁয়াই। এর পাশাপাশি মরশুমী বিষয়গুলি তো আছেই। আসলে শীতের মরশুমে হাওয়ার গতিবেগ কমে যায়। যা দূষণকারী পদার্থের উপস্থিতি আরও বাড়িয়ে দেয়। কলকাতা, হাওড়া এবং দিল্লিতে দীপাবলির পরেই বাতাসের মানের ক্ষেত্রে অবনতি দেখা গিয়েছে। এদিকে দীপাবলির আগে কলকাতা এবং হাওড়ায় বাতাসের মান ছিল গুড থেকে মডারেট ক্যাটাগরির মধ্যেই। যদিও সেই সময় দিল্লির বাতাসের মান পৌঁছে গিয়েছিল ভেরি পুওর-এ।
দীপাবলিতে একিউআই উঠে গিয়েছিল ১৫৫ (মডারেট)-য়। অন্যদিকে হাওড়ার একিউআই ছিল ১২৭ (মডারেট)। সেই সময় দিল্লির একিউআই ছিল ৩৩৯ (ভেরি পুওর)। তবে দীপাবলির পরে উত্তরোত্তর বাড়তে শুরু করে কলকাতার একিউআই। গত ২ নভেম্বরে কলকাতার একিউআই উঠে গিয়েছিল ২৪২ (পুওর)-এ। অন্যদিকে হাওড়ার একিউআই ছিল ২৮৮ (পুওর)। সেখানে দিল্লির একিউআই ৩৮০ (সিভিয়ার) পার করেছে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে, দীপাবলির উৎসবের কারণে বাজি পোড়ানো আর তার ধোঁয়ার জেরে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বেড়েছে বায়ুদূষণ। আর সেখানে দিল্লির তিন শহরে বায়ুদূষণের মাত্রা তো লাগামছাড়া পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। যার জেরে বাড়ছে স্বাস্থ্যজনিত উদ্বেগ।
শিশু এবং বয়স্ক:
শ্বাসজনিত সমস্যা, অ্যাজমা বা হাঁপানি এবং কার্ডিওভাস্কুলার রোগের ঝুঁকি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
যাঁরা বাইরে কাজ করেন:
দীর্ঘক্ষণ বাইরে কাজ করার ফলে দূষণকারী পদার্থের সংস্পর্শে আসেন তাঁরা। যার জেরে দীর্ঘস্থায়ী জটিল শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে থাকে।
অতিরিক্ত জনসংখ্যা:
আগে থেকেই থাকা স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা সীমিত হওয়ার জেরে সমস্যা আরও বাড়ছে।
একিউআই-এর মাত্রা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। কলকাতা এবং হাওড়ার একিউআই-এর মান ৩০০-র নীচে থাকবে। দিল্লির একিউআই তো হামেশাই পৌঁছে যাচ্ছে ৪০০-র উপরে। যার জেরে স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছে রাজধানীতে। অনলাইনেই স্কুল এবং অফিস চালানো হচ্ছে।
তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা:
১. গাড়ির ধোঁয়া এবং ধুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
২. ফসলের আগাছা এবং আবর্জনা পোড়ানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি।
৩. সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য একিউআই মাত্রার উপর নজরদারি বাড়াতে হবে।
দীর্ঘমেয়াদি সমাধান:
১. দূষণ স্বাভাবিক ভাবে কমানোর জন্য গ্রিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার সম্প্রসারণ করতে হবে।
২. যানবাহন এবং কলকারখানার জন্য ক্লিন এনার্জির প্রচার।
৩. দূষণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত অবদান কমানোর বিষয়ে এলাকার বাসিন্দাদের জন্য জনসচেতনতামূলক প্রচার করা জরুরি।
স্বাস্থ্যের বিষয়ে কী করা জরুরি, তার লক্ষ্য:
১. তীব্র দূষণের সময়ে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং ঝুঁকির আওতায় থাকা রোগীদের জন্য এয়ার-পিউরিফায়িং মাস্ক বিতরণ করা উচিত।
কলকাতা এবং হাওড়ায় ক্রমবর্ধমান দূষণের মাত্রাকে সঙ্কট নয়, বরং ওয়ার্নিং সিগনাল হিসেবে দেখা হচ্ছে। এলাকার বাসিন্দা, কলকারখানা এবং পলিসিমেকাররা মিলে যদি একজোট হয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, তাহলে বায়ুদূষণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। দিল্লির থেকে নেওয়া শিক্ষা বিবেচনা করতে হবে। জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এতে মানুষ ভাল ভাবে বাঁচতে পারবেন।
ইন্ডিয়া ক্লিন এয়ার নেটওয়ার্কের চেয়ারপার্সন অজয় মিত্তল (Ajay Mittal, Chairperson of India Clean Air Network) বলেন যে, “বায়ুদূষণ শুধু দিল্লির সমস্যা নয়। কলকাতার বাতাসের মানও হামেশাই পুওর থেকে ভেরি পুওর ক্যাটাগরিতে ঘোরাফেরা করছে। যার জেরে গুরুতর স্বাস্থ্যজনিত সমস্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধীরে ধীরে অদৃশ্য সমস্যা বাসা বাঁধছে। আর পদক্ষেপ গ্রহণ না করার ফলে স্বাস্যজনিত সমস্যার ঝুঁকিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আসলে কোনও শহরই আর আজ নিরাপদ নয়।”