দিপান্বিতা অমাবস্যার আগে ভূত চতুর্দশী। সেদিন মন্দিরে মরদেহ এনে মৃতের আত্মার শান্তি কামনা করে পরিবার। সময় গড়ালেও ঠনঠনিয়া কালীবাড়ির পুজো ঐতিহ্য হারায়নি। পুজো যখন শুরু, তখন কলকাতা শহরটাই ছিল না। কালের অদল বদল থেকে ইতিহাসের পাতা ওলটানো.. অনেক কিছুই দেখা.. শোনা যায়, ১৭০৩ সালে সুতানুটি মহাশ্মশানে তান্ত্রিক উদয়ানন্দ ব্রহ্মচারী মািটর কালীপ্রতিমা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৭০৬ সালে শিষ্য শংকর ঘোষ তৈরি করেন মন্দির। ঠনঠনিয়া কালীবাড়িতে কালীর সিদ্ধেশ্বরী রূপ। রামকৃষ্ণ পুজো করত। কথিত আছে, শিষ্য কেশবচন্দ্র সেন অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। রামকৃষ্ণ চিনি আর ডাব দিয়ে পুজো দিয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে কেশবচন্দ্র সুস্থ হয়ে ওঠে। ঠনঠনিয়া কালীবাড়িতে ৩৬৫ দিনই আমিষ ভোগের রীতি। তবে ফলহারিণী পুজোর দিন আর দিপান্বিতা অমাবস্যায় নিরামিশ ভোগ দেওয়া হয় । মনস্কামনা পূরণে সকাল থেকে ভক্তদের ভিড় উপচে পড়েছিল। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিও পৌঁছেছিলেন মায়ের আশীর্বাদ নিতে।
advertisement
করুণাময়ী কালী মন্দির, টালিগঞ্জ:
ঠনঠনিয়ায় যেমন ইতিহাস জীবন্ত... টালিগঞ্জের করুণাময়ী কালী মন্দিরও তার নিজের বৈশিষ্ট্যে আলাদা। এখানে কালীপুজোর আগে কুমারীপুজোর রীতি। শোনা যায়, জমিদার সাবর্ণ রায়চৌধুরীর বংশধর নন্দদুলাল রায়চৌধুরী ১৭৬০ সালে কালী পুজো শুরু করেন। এবার ২৫৯তম বছর। এবার কুমারী হিসেবে পুজো করা হয় পাঁচ বছরের সৃঞ্জয়ী দাসকে।
তিনটে পুত্রসন্তানের পর কন্যাসন্তানের। ইচ্ছেপূরণ হয়। কিন্তু সাত বছরের মাথায় সে মেয়ে মারা যায়। করুণাময়ী। হতাশায় জর্জরিত নন্দদুলাল স্বপ্ন দেখেন, মেয়ে বলছে, আমি তো তোমাকে ছেড়ে যাইনি। আদিগঙ্গার পাশে বটগাছ আছে, সেখানে কালো পাথর আছে। সেটিকে প্রতিষ্ঠা কর, আমি সেখানেই ধরা দেব ৷
এরপর থেকেই শুরু পুজো ৷
ভাত, পোলাও, খিচুড়ি, কয়েক রকমের মাছ আর তরকারি দিয়ে পুজোয় ভোগ দেওয়া হয় এখানে। পশু নয়, ফল বলি দেওয়াই রীতি। দীপান্বিতা অমাবস্যার আগে ভক্তি আর নিষ্ঠার আড়ম্বরে সেজে উঠেছিল বিভিন্ন কালীমন্দির। ঠনঠনিয়া আর করুণাময়ী কালীবাড়ির পুজোতেও সেই ভক্তিই শেষ কথা বলল।