প্রশ্ন – রাজ্যসভার সাংসদ পদ ছাড়ার সিদ্ধান্ত কেন নিতে হল?
উত্তর – একমাস হতে চলেছে কলকাতা শহর একদম স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। আশপাশের সব জায়গায় সারাক্ষণ শুধু প্রতিবাদ আর প্রতিবাদ। এটাকে তো আমাদের বিশ্লেষণ করতে হবে। আমি একমাস ধরে দেখছি। আমি ছদ্মবেশে প্রতিবাদে গিয়েছিও। একটা স্বতঃস্ফূর্ত রাগ আর আক্রোশ রয়েছে সবার মধ্যেই ৷ অভয়াকে নিয়ে নিশ্চয়ই দুঃখের কাণ্ড ঘটেছে ৷ কিন্তু অভয়া ছাড়াও, উদাহরণ হিসাবে তাকে ব্যবহার করে সিস্টেমের বিরুদ্ধে একটা ক্ষোভ। এটাকে মেটাতে হবে। এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ভাবা ভুল হবে।
advertisement
আরও পড়ুন– স্টিলের বদলে অ্যালুমিনিয়াম, রাতারাতি বদলে গেল গিরিশ পার্কের মেট্রো লাইন
প্রশ্ন- আপনি চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, আগের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখতে চান। এর অর্থ কি ? কোথাও কি কোনও বদল এসেছে?
উত্তর – আমি আগে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখেছি ৷ উনি হলে ঝাঁপিয়ে পড়তেন এই অবস্থা চলতে থাকলে। উনি কিন্তু এখন অনেক সংযত ব্যবহার করছেন। উনি যদি জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে গিয়ে একবার কথা বলতেন তাহলে সব মিটে যেত। আমার ধারণা অবশ্য ৷ আর ওই লোকটি যে প্রিন্সিপাল- তাকে যদি প্রথম দিনেই সাসপেন্ড করে দিতেন, ওর সঙ্গী যারা রয়েছেন তাদেরকেও, তাহলেও হত। সাসপেন্ড করা মানে সরিয়ে দেওয়া ৷ তারপর প্রমাণ হলে দেখা যাবে ৷ কিন্তু সেই একমাস লাগল একে ধরতে, ওকে সরাতে ৷ এটাতেই আমার খারাপ লাগে ৷
আরও পড়ুন– দিনভর মেঘলা আকাশ ও আবহাওয়ার পরিবর্তনের সম্ভাবনা, বৃষ্টির পূর্বাভাস রাজ্য জুড়েই
প্রশ্ন- আপনার এই সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনার কথা বলেছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। কী কথা হল?
উত্তর – মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা হল। এটা খানিকটা ব্যক্তিগত ব্যাপার ৷ উনি বলেছেন আমি শুনেছি। আমি বলেছি উনি শুনেছেন ৷ আমার বক্তব্য আমি চিঠিতে ও পরে কথার মাধ্যমে বলতে পেরেছি। আমি ওনাকে বলেছি, আপনি দয়া করে নিজের হাতে গোটা বিষয়টি নিন শক্ত হাতে ৷ আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারদের সঙ্গে বসুন। আর এই রাগটি পুরোপুরি রাজনৈতিক নয় ৷ এই আমার কথা। সামাজিক প্রতিবাদে এটা দাঁড়িয়ে গিয়েছে। আগের উনি হলে সব সিচুয়েশনে ঝাঁপিয়ে পড়তেন ৷ ইমোশনালি ঝাঁপিয়ে যদি পড়তেন প্রথম বা দ্বিতীয় দিনে তাহলেই মিটে যেত।
প্রশ্ন – তৃণমূল কংগ্রেসের কি এই ইস্যুতে আরও সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল?
উত্তর – কারও একজন বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। একমাস হয়ে গেল। যদিও এটা অন্ত: রাজনৈতিক ব্যাপার। তবে এটা রিভিউ করা দরকার। আদালত, সিবিআই কী করবে, সেটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু কলকাতা শহর স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে, এটা তো আর আদালত দেখতে আসবে না।
প্রশ্ন – পদত্যাগের রাস্তা থেকে তাহলে সরে আসছেন না?
উত্তর – আমার নীতি আমি রেখে যাব। কিন্তু রাজনীতিতে আর নয়। অনেক ভাবনাচিন্তা করে সকলের মাঝে বলে ফেলেছি। তাই আর সিদ্ধান্ত বদল নয়। আমি বাইরে থেকেও সাম্প্রদায়িক শক্তি, অগণতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে পারব।
প্রশ্ন – আপনি আমলা ছিলেন৷ প্রশাসনিক কাজে আপনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে ৷ যা ঘটে চলেছে, তা কি প্রশাসনিক আধিকারিকরা মেটাতে পারছেন না?
উত্তর – আমলারা বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগের মুখ্য সচিবের উপর আমার কোনও আস্থা নেই। তাঁকে ছোটবেলা থেকে জানি। সে যে কী করে মুখ্য সচিব হল তাও বুঝিনি। বর্তমান মুখ্য সচিবের আমলা হিসাবে দারুণ সুনাম আছে। আগের জন কীসব লোক? এরা ভয়ে মরে? নাকি বলতে চায় না? ওপিনিয়ন দেয় না? আমলাদের কাজ চিকিৎসকের মত। খালি হ্যাঁ হ্যাঁ করলে হবে না। যেটা খারাপ সেটা তো বলতে হবে। বুদ্ধবাবু আমার উপর রেগে গেলেন। আমি কলকাতা ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম। আবার ওরা দিল্লিতে রেগে গিয়েছিল আমি সেখান থেকে আরেক জায়গায় চলে গেলাম।
প্রশ্ন – আপনি আপনার দলের অন্দরে এই ইস্যুগুলো বলেছিলেন আগে?
উত্তর – আমি দলের সঙ্গে আগেও এই বিষয়ে কথা বলেছি ৷ কথা না বলে কি কেউ ‘Political Suicide’ করে।