প্রান্তিক এলাকা থেকে দরিদ্র পরিবারের মেধাবী ছেলেরাই একমাত্র এই মেন হস্টেলে থাকার অনুমতি পায় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে৷ বাকি, হস্টেলের দাদাদের হাজার টাকা বা সামান্য কিছু দিলেই গেস্ট হিসাবে থাকার সুযোগ মেলে৷ ঠিক যেমনটা হয়েছিল মৃত ছাত্রের ক্ষেত্রে৷ এই ধরনের ছাত্রেরা এক সিনিয়র দাদার গেস্ট হিসাবে হস্টেলে থাকতে পারে৷ হস্টেল ‘কালচার’ অনুযায়ী, সেই সিনিয়র দাদা তখন হয়ে যায় তার ‘হস্টেল বাপ’৷ অলিখিত প্রথা অনুযায়ী, নেশার উপাদান তৈরি করা থেকে শুরু করে, ‘হস্টেল বাপের’ বিছানার চা-দর বদলে দেওয়া, জল ভরে আনা এবং অন্যান্য ফাই ফরমাশ খাটতে হয় গেস্ট হয়ে আসা নবাগত ছাত্রকে৷ তেমনটাই জানতে পারা গিয়েছিল আবাসিকদের একাংশের বয়ানে৷
advertisement
এবার জানা গেল আরও নতুন কথা৷ শুধু ‘হস্টেল বাপ’ই নয়, গোটা হস্টেলের সিনিয়রদের জন্যেও খাটতে হত নাকি নবাগত ছাত্রদের৷ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলে বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরে হস্টেলের বেশ কয়েকজন প্রথম বর্ষের আবাসিককে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ৷ জানা গিয়েছে, সেই সময়েই হস্টেলের দাদাদের ‘দাদাগিরি’ নিয়ে মুখ খুলেছে বেশ কয়েকজন ছাত্র৷ কী বলেছে তাঁরা?
জানা গিয়েছে, প্রথম বর্ষে পড়াকালীন হস্টেল সিনিয়রদের উপস্থিতি ও অনুমতি ছাড়া বাড়িতে ফোন পর্যন্ত করতে পারত না ছাত্রেরা৷ তাছাড়া, জুনিয়রদের জন্য তৈরি হয়েছিল রস্টার৷ তাতে লেখা ছিল, কে কবে টয়লেট পরিষ্কার করবে, কোন দিন কোথায় কার ‘ডিউটি’ থাকবে৷
এছাড়াও, সিনিয়রদের ঘর গুছিয়ে দেওয়া, ঘর পরিষ্কার করে দেওয়া, বিছানায় চাদর পেতে দেওয়ার মতো কাজ তো থাকতই৷ এক একদিন প্রায় প্রত্যেক সিনিয়রের জলের বোতল ভরে দেওয়ার দায়িত্ব পড়ত কারও কারও উপর৷ তারপরে, রাত ৯টা বাজলেই আতঙ্ক৷ শুরু হত ‘ইন্ট্রো’ পর্ব৷ সূত্রের খবর, প্রতিটা সিনিয়রের ঘরে গিয়ে নিজেদের ‘ইন্ট্রো’ দিতে হত প্রথম বর্ষের পড়ুয়া আবাসিকদের৷ তাতে নিজের নাম ঠিকানা, স্কুল, প্রাপ্ত নম্বর তো বটেই, এমনকি, বাবা-মা সম্পর্কেও আপত্তিকর প্রশ্নের উত্তর দিতে হত৷ কোনও কোনও ছাত্রের ক্ষেত্রে আবার নিধান থাকত ‘বিবস্ত্র’ হয়ে ‘ইন্ট্রো’ দেওয়ার৷ প্রথম কয়েকমাস এই পর্ব চলার পরে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হত পরিস্থিতি৷
সূত্রের খবর, পড়ুয়ারা জানিয়েছেন, হস্টেলের ‘দাদাদের’ এমন ‘দাদাগিরির’ কথা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অজ্ঞাত ছিল না৷ কিন্তু, এ নিয়ে দীর্ঘসময় ধরেই তেমন কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি৷ মফস্সল থেকে আসা একটা সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা ছেলের মৃত্যু পরে ধীরে ধীরে আলোচনা হতে শুরু করল এই সব নিয়ে৷
গত ৯ অগাস্ট, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের তিন তলা থেকে নীচে পড়ে যায় বাংলা বিভাগের এক নবাগত ছাত্র৷ ছেলের মৃত্যুতে হস্টেলের সিনিয়র দাদাদের বিরুদ্ধে ব়্যাগিংয়ের অভিযোগ আনেন মৃত ছাত্রের বাবা৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী কমিটির রিপোর্টেও ব়্যাগিংয়ের তত্ত্ব উঠে এসেছে৷