মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, ইনডোর স্টেডিয়ামের অডিও সিস্টেম ঠিকমতো কাজ করছে না, অথচ তা নিয়ে আগাম কোনও প্রস্তুতি বা সাউন্ড চেক করা হয়নি। তিনি প্রশ্ন তোলেন, এমন গুরুত্বপূর্ণ সভায় প্রযুক্তিগত দায়িত্বে থাকা দলীয় কর্মী ও প্রশাসন কেন নজর রাখেনি। একই সঙ্গে ভোটার তালিকা সংশোধন সংক্রান্ত প্রক্রিয়ার একাধিক অস্পষ্টতা তুলে ধরে তিনি বলেন, লজিকাল ডিসক্রিপেন্সি বা তথ্যে অসঙ্গতি থাকলে ভোটাররা কীভাবে কাজ করবেন, সে বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও স্পষ্ট নির্দেশিকা জারি হয়নি। দ্রুত সেই সমস্যার সমাধান হবে—এমন কোনও বাস্তবসম্মত রূপরেখাও সামনে আসেনি।
advertisement
শুনানির ভেন্যু কোথায় হবে, তা নিয়েও কোনও নির্দিষ্ট তালিকা প্রকাশ করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন তৃণমূলনেত্রী। তিনি কটাক্ষ করে বলেন, “গুজরাটের লোকেরা এসে বাংলায় ভোট করবে নাকি? সব কিছুর একটা লিমিট থাকে।” তিনি জানান, গোটা প্রক্রিয়ার উপর একজন ‘স্পেশাল অবজারভার’ থাকবেন—এই তথ্য দলীয় কর্মীদের জানা দরকার। শুনানি প্রসঙ্গে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “হেয়ারিং নয়, ওদের ইয়ারিং দিয়ে দিন।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও অভিযোগ করেন, প্রতিদিনই বিএলও অ্যাপে নতুন নিয়ম বদলানো হচ্ছে, অথচ কোনও স্থায়ী SOP নেই। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করে তিনি তাঁকে ‘অপরদার্থ’ বলে আক্রমণ করেন এবং বলেন, এমন স্বৈরাচারী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী তিনি আগে দেখেননি। তাঁর অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীকে কার্যত নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে এবং দেশকে দাঙ্গাবাজ শক্তির হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। গান্ধীজির নাম বাদ দিয়ে দেশকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে তিনি বলেন, ২০০২ সালের EPIC নম্বরের সঙ্গে বর্তমান EPIC নম্বরের অনেক ক্ষেত্রেই মিল নেই। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এটি কোনও ক্রিমিনাল কেস নয়। তাঁর অভিযোগ, খসড়া তালিকা থেকে ইতিমধ্যেই ৫৮ লক্ষ নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, এখন আবার আরও দেড় কোটি নাম বাদ দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। বিজেপির এজেন্টরা নাকি তালিকা তৈরিতে প্রভাব খাটাচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন এবং নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
ডিলিমিটেশনের কারণে ওয়ার্ড ও বিধানসভা কেন্দ্র বদলানো হয়েছে বলেও অভিযোগ তোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, বহু বিএলও শিক্ষক, যাঁদের সামনে মাধ্যমিক পরীক্ষা রয়েছে। তাঁদের উপর অতিরিক্ত চাপ না দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। রাজ্য সরকারকে না জানিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার কিছু আধিকারিক নিয়োগ করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি এবং তাঁদের পরিচয় খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন।
বাংলা ও ইংরেজি বানানের পার্থক্যের কারণেও ভোটার তালিকায় ভুল হচ্ছে বলে দাবি করেন তৃণমূলনেত্রী। তিনি বলেন, বাংলায় যে নামের বানান ‘a’, ইংরেজিতে তা ‘aa’ হয়ে যাচ্ছে, ফলে গরিব মানুষ এই জটিলতা বুঝতে পারছে না। ২০০২ সালে অধিকাংশ ক্ষেত্রে হোম ডেলিভারি ছিল, তখন বাবা-মায়ের সার্টিফিকেট কীভাবে মিলবে—এই প্রশ্নও তোলেন তিনি। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় আক্রমণ শানিয়ে তিনি বলেন, “ওরা পারে না এমন কোনও কাজ নেই, এক সেকেন্ডে ডুপ্লিকেট আর ফেক বানাতে পারে।”
শেষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দেন, এলাকায় এলাকায় শান্তিপূর্ণ মিছিল হবে, তবে বিএলএদের কোনও ভাবেই বিরক্ত করা যাবে না। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা নিয়ে কোনও আপস করা হবে না বলেও তিনি স্পষ্ট করে দেন।
