২০০৬ সালে রাজ্য বামফ্রন্ট সরকারের আমলে সিঙ্গুরে টাটার ন্যানো গাড়ি কারখানার জন্য জমি অধিগ্রহণকে ঘিরে সংঘাতের শুরু। পরিণতি ন্যানো বিদায়। শিল্পের জন্য কৃষিজমি অধিগ্রহণকে ঘিরে শুরু হয়েছিল কৃষি বনাম শিল্পের তরজা। আজ সেই ঘটনার ১৭ বছর পরেও রাজ্যের শিল্পায়নকে ঘিরে সেই তরজা অব্যাহত।
রাজ্যের শিল্প বাজেট নিয়ে আলোচনায় উঠে এল শিল্পের জন্য রাজ্যের জমি নীতির প্রসঙ্গ। বিজেপি বিধায়ক অম্বিকা রায় বলেন, "বারবারই রাজ্য সরকার বলেন, সরকার জোর করে জমি অধিগ্রহণ করবে না। কিন্তু, জোর করার প্রশ্ন কেন উঠছে, সেটা বোধগম্য নয় আমাদের। আসলে, জমি নেওয়ার জন্য রাজ্যের কোন সুনির্দিষ্ট জমি অধিগ্রহণ নীতি না থাকায়, সরকারকে এসব কথা বলে সিঙ্গুর মডেলকে বাঁচিয়ে রাখতে হচ্ছে। জমি অধিগ্রহণ করতে হলে জমির মালিককে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ১৪০০ কোটির শিল্প বাজেটে তা সম্ভব নয়। "
advertisement
বিজেপির মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা বলেন, ''এই সরকার সিঙ্গুরের মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে। সিঙ্গুরের জমিতে কৃষি, শিল্প কোনটাই হয়নি। রাজ্যের ক্ষমতা দখল করতে তৃণমূল টাটার ন্যানোকে তাড়িয়ে শুধু ন্যানো গাড়ি তৈরির কারখানার দরজাই বন্ধ করেনি, দেশের শিল্পপতিদের কাছে রাজ্যের শিল্পায়ন নিয়ে ভুল বার্তা দিয়েছে৷ তার জন্যই আজও আমরা শিল্পে পিছিয়ে। সিঙ্গুরে টাটাকে বিদায় করে রাজ্যে ২০১১-তে সরকারে আসার পর এই মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যে নতুন কোনও কারখানার ফিতে কাটতে দেখিনি। "
বিরোধীদের সমালোচনার জবাবে শিল্প ও বানিজ্যমন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ''সিঙ্গুরের কাছেই ইন্ডাস্ট্রি পার্ক হয়েছে। যে টাটা বিদায়ে আপনারা অশ্রুসিক্ত, সেই টাটাই রাজ্যের খড়গপুরে টাটা মেটালিক্সে, গত তিন বছরে বিরাট অঙ্কের বিনিয়োগ করেছে। আর, যে ন্যানো গাড়ির কারখানা না হওয়ার জন্য আপনারা হা হুতাশ করছেন, সেই ন্যানো গাড়ির কারখানা এ রাজ্য থেকে গিয়ে গুজরাতে কারখানা করে বন্ধ করে দিতে হয়েছে। রাজ্যে শিল্প না হওয়ার জন্য পরিকাঠামো ও শিল্প বান্ধব পরিবেশ না থাকার বিষয়ে বিরোধীদের তোলা অভিযোগকে খারিজ করে শিল্পমন্ত্রী বলেন, "মনে রাখবেন, শিল্প করা রাজ্য সরকারের একার দায় বা দায়িত্ব নয়। রাজ্যের শিল্পায়নে কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতা দরকার। দুর্ভাগ্য এটাই, কেন্দ্র সহযোগিতা তো করেই না, উল্টে রাজ্যে কেন্দ্র সরকারি সংস্থাগুলিকে একের পর এক বন্ধ করে দিচ্ছে। কেন্দ্রের নীতি হল বেচো ইন্ডিয়া, বেচো। দুর্গাপুর স্টিল, হিন্দুস্তান কেবলস থেকে শুরু করে এয়ার ইন্ডিয়া - শুধু বেচেই চলেছে। এই প্রতিকূলতা, বঞ্চনার মধ্যেও আমরা সাধ্যমত এগোচ্ছি।"
আরও পড়ুন: চাকরি-বিক্রিতে দলীয় যোগ! শান্তনু ফাঁস করে দিলেন সবকিছু? ১১১ কোটি নিয়ে তোলপাড় দাবি ইডি-র
বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, রাজ্যে কোন আইনের শাসন নেই। এখানে বিনিয়োগ করতে এলে, শাসক দলের মদতপুষ্ট তোলাবাজদের শিকার হতে হয় শিল্পপতিদের। এমনকি আইনি নিরাপত্তাটুকুও পান না শিল্পপতিরা।কারণ, দুষ্কৃতীরা এখানে আদলতের ভেতরেও ঢুকে পড়তে পারে। তাই শিল্প বান্ধব পরিবেশ না থাকায় এখানে মুখ্যমন্ত্রীর বেঙ্গল গ্লোবাল সামিটের মতো বাৎসরিক শো-তে যোগ দিলেও, বিনিয়োগ করে পার্শ্ববর্তী ওড়িশা, ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যে।
পাল্টা সমালোচনায় বিরোধীদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ''আগে নিজেদের দিকে তাকান। জীবন বীমা, স্টেট ব্যাঙ্কের মত সংস্থায় সাধারণ মানুষের টাকা তছরুপ করে পালানো বিজয় মালিয়া, নীরব মোদীদের আপনারা ধরতে পারলেন না কেন? কেন তাদের বিদেশে পালাতে সেফ প্যাসেজ করে দেওয়া হল?
আরও পড়ুন: কারও থেকে ৪ লাখ, কারও থেকে ২০, এবার সরাসরি অভিষেকের কাছে দুর্নীতি জানালেন নেতারা!
পর্যবেক্ষকদের মতে, বিধানসভায় রাজ্যের শিল্প বানিজ্য নিয়ে আলোচনা হবে, তাতে সমালোচনা আর পাল্টা সমালোচনা হবে, সেটা খুবই সঙ্গত। সেটা রাজ্যের শিল্পায়নের জন্য স্বাস্থ্যকরও বটে। কিন্তু, শিল্প বাজেট আলোচনার মতো গুরুত্বপূর্ণ দিনে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী ও বিরোধী দলনেতার অনুপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত।
