বেসরকারি রেল প্রকল্প নিয়ে ২৩ সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছিল ভারতীয় রেল মন্ত্রক। রেল বোর্ড বৈঠক করেছিল দেশি ও বিদেশি উভয় সংস্থার সাথেই। রেল মন্ত্রক সূত্রে খবর, ওই বৈঠক আসলে ছিল প্রি অ্যাপ্লিকেশন বৈঠক। যেখানে বেসরকারি রেল হাতে নেওয়ার আগে বিভিন্ন সংস্থা তাদের বক্তব্য যেমন জানিয়েছিল, তেমনি কেমন হতে চলেছে প্রাইভেট পলিসি তা বুঝিয়ে দিয়েছিল রেল মন্ত্রক। বেসরকারি রেল নিয়ে এই বৈঠকে হাজির ছিল পশ্চিমবঙ্গের টিটাগড় ওয়াগনও। যে ২৩ সংস্থা আগ্রহ দেখিয়েছিল তার মধ্যে ছিল বোম্বার্ডিয়ার, অ্যালস্টমের মতো বিদেশি সংস্থা। ছিল দেশি সংস্থা BHEL, BEML, IRCTC, CAF, মেধা, জে কে বি ইনফ্রাস্ট্রাকচার, ভারত ফোর্জ, স্টারলাইট-সহ একাধিক সংস্থা।
advertisement
IRCTC তেজসের মতো ট্রেন চালায়। টিটাগড় ওয়াগনের অভিজ্ঞতা আছে বিভিন্ন ধরণের রেল কোচ তৈরির ও একই সঙ্গে তারা পুণে মেট্রোয় আত্মনির্ভর প্রকল্পের একেবারে শুরুতে তারা নিয়ে আসছে অত্যন্ত আধুনিক মেট্রো কোচ। ফলে যে সব সংস্থা ওই বৈঠকে হাজির ছিল তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা রয়েছে মারাত্মক। বেসরকারি সংস্থাগুলির বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রকল্প যাতে খাতায় কলমে সীমাবদ্ধ না থেকে পুরোপুরি ভাবে সাফল্য পায়, তার জন্যই এই ধরণের বৈঠক বারবার হচ্ছে। এই বৈঠকের পরেই রেল মন্ত্রক দরপত্র আহ্বান করে। গোটা দেশে মোট ১২টি ক্লাস্টার জুড়ে চলবে এই সব বেসরকারি ট্রেন। তার মধ্যে থাকছে অন্যতম ক্লাস্টার হাওড়া। এই ক্লাস্টারে মোট ৭ রুটে চলবে বেসরকারি ট্রেন। যার মধ্যে হাওড়া থেকে দিল্লি, প্রতিদিন চলবে, সময় নেবে ১৬ ঘণ্টা। হাওড়া থেকে চেন্নাই ট্রেন প্রতিদিন চলবে, সময় নেবে ২৬ ঘণ্টা।
হাওড়া থেকে বেঙ্গালুরু ট্রেন প্রতিদিন চলবে, সময় নেবে ৩৩ ঘণ্টা। হাওড়া থেকে রাঁচী প্রতিদিন চলবে, সময় নেবে ৭ ঘন্টা। হাওড়া থেকে পুরী, প্রতিদিন চলবে, সময় নেবে ৭ ঘন্টা, প্রতিদিন চলবে। হাওড়া থেকে পুণে, সপ্তাহে দু'দিন চলবে। সময় নেবে ২৭ ঘন্টা। শিয়ালদহ থেকে গুয়াহাটি, সপ্তাহে চলবে ৩ দিন। সময় নেবে ১৭ ঘন্টা। বেসরকারি যে সব ট্রেন চলবে, তাতে থাকবে অত্যাধুনিক সব ব্যবস্থা। যেমন এই ট্রেন ছুটবে ১৬০ কিমি প্রতি ঘণ্টায়। যাত্রীরা কোনও ধরণের ঝাঁকুনি অনুভব করবেন না। কোনও আওয়াজ যাত্রীদের কানে যাবে না। অত্যাধুনিক ব্রেকিং ব্যবস্থা। প্রতি কোচে থাকবে স্লাইডিং দরজা। দরজা ভেতর ও বাইরে উভয় দিক থেকে খোলার ব্যবস্থা থাকবে। কামরার ভেতরে থাকছে টক ব্যাগ। যার সাহায্যে চালক ও গার্ডের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারবেন যাত্রীরা। সমস্ত কামরায় একাধিক সিসি ক্যামেরা, যার সাগায্যে চালক সকলকে দেখতে পাবেন। কামরায় থাকবে ডিজিটাল বোর্ড, দু'প্রান্তে। প্রতি জানলার কাঁচ হবে গ্লেজড সেফটি গ্লাস, ফলে বাইরের চড়া আলো বা রোদ্দুর ভেতরে ঢুকবে না।
২০২০-এর ডিসেম্বর মাসেই নীতি আয়োগ বেসরকারি ট্রেন চালানো নিয়ে ছাড়পত্র দিয়েছিল। বৈঠক সম্পর্কে টিটাগড় ওয়াগনের সিএমডি উমেশ চৌধুরী জানান, "দীর্ঘদিন ধরেই আমরা রেল সম্পর্ক বিষয় নিয়ে আগ্রহ দেখিয়ে আসছি। তবে আমরা প্রতিদিনের ট্রেন অপারেশনসে নয়, আমরা কোচ তৈরি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখিয়েছি।" রেল মন্ত্রক সূত্রে খবর, আরামদায়ক রেল পরিষেবা দিলে ইউরোপের দেশগুলোর মতো এখানেও লাভ হবে এটা ভাবা হয়েছিল। ইতিমধ্যেই তেজসের মতো স্পেশাল ট্রেন চালায় আই আর সি টি সি। তাদের অন্যতম শীর্ষ আধিকারিক দেবাশিষ চন্দ্র জানিয়েছেন, "তেজস একটা স্ট্যান্ডার্ড মার্ক হয়ে গেছে। ফলে মানুষের বেসরকারি ট্রেন নিয়ে আগ্রহ অনেকটা বেড়ে গেছে।" তবে কেন্দ্র এখনও ভাবছে পুরোপুরি ভাবে প্রকল্প সফল হবে। তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায় অবশ্য জানিয়েছেন, "আসলে এই সব বিক্রি করে বা বেসরকারি হাতে দিয়ে দলের কোষাগার পূরণ করছেন নেতারা।"
Abir Ghoshal
