সোমবার সকাল থেকেই রাস্তায় বহু মানুষ। সরকারি বা বেসরকারি, অফিসে কাজে যোগ দিতে হবে, তাই যোগাযোগের ভরসা সেই বাস। রাস্তায় মানুষ বলছে একটু অপেক্ষা করতে হলেও তাদের ভরসা কিন্তু সেই সরকারি বাসই। শহরের প্রাণকেন্দ্রে এসপ্ল্যানেড মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকলেই দেখা যাচ্ছে রাস্তার চারিদিকে ১০ সরকারি বাস থাকলে, চোখে পড়ছে ২-৩ বেসরকারি বাস বা মিনিবাস। সরকারি বাস ডিপোতে গিয়েও দেখা গেল, বাস ধরার জন্যে লম্বা লাইন।
advertisement
এদিন থেকে অবশ্য শহরে বাসের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম ২০০ নন এসি বাস কলকাতা থেকে পাশ্ববর্তী জেলায় যাতায়াতের জন্য চালাচ্ছে। এছাড়া বেসরকারি এসি বাস, সরকার টিকিট ছাপিয়ে চালাচ্ছে। সেই সংখ্যাও ২০০। ফলে বেসরকারি বাসের দিকে না চেয়ে সরকারি বাসেই সওয়ার হচ্ছেন যাত্রীরা।
এসপ্ল্যানেডে সরকারি বাস ডিপোর ম্যানেজার অনিল অধিকারী। তিনি জানাচ্ছেন, "সরকারি বাসে আমাদের চাহিদা বাড়ছে। সব আসনে লোক হচ্ছে। গত তিনদিন ধরে দুরপাল্লার বাসে যাত্রী বেড়েছে। আজকেই ২৫টি বাস আমরা দুরপাল্লার রুটে চালিয়েছি। দুরপাল্লার যাত্রা হলে যাত্রীরা এসি বাসেও টিকিট নিচ্ছে। অনেকে এসি বাস চাইছেন। এসি ভলভো চালানো তাই আমরা শুরু করেছি। তবে অল্প যাত্রায় কেউ যেতে চাইছেন না। সেক্ষেত্রে তারা নন এসি বাস চাইছেন।" সরকারি আধিকারিকের বক্তব্যের মিল অবশ্য খুঁজে পাওয়া গেল বাস ডিপো জুড়ে। নন এসি বাসে একের পর এক যাত্রী যাচ্ছেন।
এসি বাসে অবশ্য পুরো আসন ভরতে সময় নিচ্ছে। তবে মানুষ অপেক্ষা করছেন সরকারি বাসের জন্যেই। "সরকারি বাসে ভরসা রাখতে হবে কারণ বিকল্প বাস নেই। এখন সরকারকে দায়িত্ব নিয়ে বেসরকারি বাসের ভাড়া ঠিক করতে হবে। বেসরকারি বাসের ইচ্ছা মতো ভাড়া নেওয়া মানুষ মেনে নিচ্ছে না। এখন যদি এক মাসের জন্যে ওদের ভাড়া ঠিক করতে বলা হয়, সেই ভাড়াই কিন্তু চলতে থাকবে। সেটা মানা সম্ভব নয়। তাই আমার সরকারি বাস ভরসা।" জানাচ্ছিলেন এক যাত্রী অরুণ ঘোষ।
অপর এক যাত্রী দেবতনূ মুখার্জি জানাচ্ছিলেন, "সরকারি বাসে এখনও ভরসা রাখছি। তবে সময় নিয়ে একটু মিসগাইড হচ্ছি। বেসরকারি বাস উঠলেই বলছে ১০ টাকা। মধ্যবিত্ত মানুষ হিসাবে এটা দিতে অসুবিধা আমার। অফিস তো খুলছে কিন্তু পরিবহণ কোথায়? বেসরকারি বাসে সামাজিক দুরত্ব বজায় হচ্ছে না। সরকার এটা দেখুক। ৫০% সমস্যা সমাধান হয়েছে। বাকিটা এখনও হয়নি। তাই আমার ভরসা সেই সরকারি বাস।" তবে এসি বাসে চাপতে অনেকেই এখনও আগ্রহ পাচ্ছেন না। তারা মনে করছেন নন এসি বাস ভালো তাদের জন্যে। এমনই এক যাত্রী অলোক সাহা জানাচ্ছেন, "ওলা উবের এসি চালাচ্ছে না। আমাদের হাতেও পয়সা কমে গেছে। তাই ওলা উবেরেও আর যেতে পারছি না। এসি বাসে অবশ্য চলে যাচ্ছি। ভাড়া কম বাসে ওলা উবেরের চেয়ে। নন এসি তে যাওয়া যাচ্ছে না যা গরম পড়েছে।" এক্ষেত্রে কেউ কেউ অবশ্য সস্তায় আরামের জন্যে এসি বাস চাপছে।
দীর্ঘক্ষণ এক্সাইড মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন সত্তর পেরোনো নগেন্দ্রনাথ প্রামাণিক। বাস না পেয়ে অপেক্ষা করছিলেন। সরকারি এসি বাস পেয়ে সেখানেই উঠলেন। তিনি জানাচ্ছেন, "এসি নিয়ে আর ভয় করে কি লাভ। আমায় তো বাড়ি যেতে হবে।" ফলে এসি বাস নিয়ে যে সমস্যা চলছিল তাও মিটেছে। অন্যদিকে যারা আসানসোল, মেদিনীপুর, পুরুলিয়া বা বাঁকুড়া থেকে কাজের জন্যে আসছেন তারাও আস্থা রাখছেন সেই সরকারি বাসেই।"সরকারি বাস রাস্তায় নেমেছে বলে চলে যেতে পারছি। ট্রেন নেই কিন্তু, বাস ভরসা সেই সরকারের। চোখে পড়ার মতো পরিষেবা পাচ্ছি এখন। তবে বেসরকারি বাসের ভাড়া নিয়ে সমস্যার সমাধান করুক। না হয় সরকার বাস অধিগ্রহণ করে চালাক।" জানাচ্ছিলেন কলকাতা থেকে আসানসোলগামী যাত্রী মনোজ সরকার। সরকারি তথ্য বলছে WBTC বাসের সংখ্যা ১১২৫। যার মধ্যে ৭০০ নন এসি ও ৪২৫ এসি বাস রয়েছে। অপর নিগম, SBSTC। তাদের ৮৭০ নন এসি ও ৪০ এসি বাস রয়েছে। দুই নিগমই জানাচ্ছে তারা নন এসি বাসের প্রতি জোর দিয়েছে। কিন্তু চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে এসি বাস নামাতে হয়েছে। চেষ্টা করা হয়েছে এয়ারপোর্ট, ডায়মন্ড হারবার সহ বেশ কিছু রুটে বা দুপুরে এসি বাস বেশি চালাতে। SBSTC জানাচ্ছে তাদের এসি বাস ৯৬%। যে এসি বাস আছে তা তারা পুরুলিয়া, মুকুটমণিপুর, আসানসোল রুটে চালাচ্ছে। যাত্রী হচ্ছে। ফলে সব মিলিয়ে ভরসা সেই সরকারি বাসই।