বর্তমানে প্রতিমা বিসর্জনের ক্ষেত্রে অনেক বারোয়ারি পুজো কমিটিগুলিই গঙ্গার বদলে শহরের বিভিন্ন জায়গার বড় পুকুর বা ঝিলগুলিকেই বেছে নিয়েছে ৷ কিন্তু বাড়ির পুজো বা উত্তর কলকাতার বিভিন্ন পুজো কমিটিগুলি এখনও গঙ্গাতেই বিসর্জনের পক্ষপাতী ৷ এর পিছনে অবশ্য বহু বছর ধরে চলে আসা কিছু নিয়ম বা মানুষের বিশ্বাসই জড়িয়ে রয়েছে ৷ রাজবাড়ি বা বনেদী বাড়ির সাবেকী প্রতিমাগুলি গঙ্গা ছাড়া অন্য কোথাও বিসর্জন হবে, সেটা কিছুতেই মেনে নিতে এখনও রাজী হন না পুজোর উদ্যোক্তারা ৷ কিন্তু এব্যাপারে এখন আরও বেশি সচেতন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলেই মত পরিবেশবিদদের ৷
advertisement
গঙ্গায় বিসর্জন দেওয়ার পর প্রতিমার কাঠামো যত তাড়াতাড়িই সরানো হোক না কেন ৷ প্রতিমার রং বা শোলার গয়না জলের সঙ্গে মেশে ৷ এছাড়া ফুল মালা তো রয়েছেই ৷ লিটার লিটার রং, প্লাস্টার অফ প্যারিস ও টক্সিক সিন্থেটিক দ্রব্যও পড়ে থাকে গঙ্গায় ৷ এমনও অনেক সময় দেখা গিয়েছে যে কলকাতার গঙ্গা ঘাটের পাড়ে প্রতিমার কাঠামো সরিয়ে দেওয়া হলেও উল্টোদিকে হাওড়ার ঘাটে ফুল-মালা জমে থাকতে ৷ তাই গঙ্গা দূষণ রোধে সব জায়গাতেই সমানভাবে পুরসভাকে তৎপর হতে হবে বলে মত পরিবেশবিদদের ৷
পরিবেশবিদ সুভাষ দত্তের মতে, ‘‘ প্রতিমার রং-এ সীসা ছাড়াও আরও অনেক কেমিক্যাল থাকে ৷ এছাড়া প্রতিমার সঙ্গে যে অঙ্গসজ্জা থাকে সেগুলিকে আগে খুলে রাখতে হয় ৷ অতীতে দেখা যেত কাঠামোগুলি দু’তিন মাস ধরে গঙ্গার পাড়ে পড়ে থাকতে দেখা যেত ৷ ২০০০ সাল থেকে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে এই নিয়ে লড়াই চালাচ্ছি আমরা ৷ বর্তমানে তাই পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি যে হয়েছে বলা যেতেই পারে ৷ রাতারাতি হয়তো সবকিছু বদল হয় না ৷ গ্রিন ট্রাইব্যুনালের নির্দেশিকা অনুযায়ী অনেক কিছুই করতে বাধ্য হয়েছে পুরসভা ৷ কিন্তু প্রতিমা জলে ফেললে রং তো গুলবেই ৷ তাই গঙ্গায় বিসর্জন না হওয়াই ভাল ৷ ’’
advertisement
এবছরও যদিও প্রতিমা বিসর্জনে গঙ্গা দূষণ রোধ করতে আরও অনেক বেশি তৎপর কলকাতা পুরসভা ৷ মঙ্গলবার রাত থেকেই শুরু হয়েছে কাঠামো সরানোর কাজ। বুধবার সকালেও পুরকর্মীরা কাঠামো, ফুল, বেলপাতা সরিয়ে সমস্ত ঘাট পরিস্কার করে দেন। ইতিমধ্যেই বাড়ির এবং বেশ কয়েকটি বারোয়ারি পুজোর প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে বাবুঘাট, বাগবাজার, শোভাবাজার, আহিরীটোলা, নিমতলা, বাজে কদমতলা ঘাটে । আজ বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের মধ্যেই প্রতিমা বিসর্জনের কাজ শেষ হয়ে যাবে ৷ হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে মঙ্গলবার রাত থেকেই শুরু হয়েছে প্রতিমার কাঠামো সরানোর কাজ ৷ ধবার সকালেও তৎপর ছিলেন পুরকর্মীরা। দুপুর পর্যন্ত চলে কাঠামো, ফুল বেলপাতা সরিয়ে ফেলার কাজ । ক্রেন, বার্জ, পে-লোডার দিয়ে সরানো কাঠামো লরি করে নিয়ে যাওয়া হয় ধাপায়।
বিসর্জন কর নিয়েও অনেক মত রয়েছে ৷ যেমন পুজো কমিটিগুলি এমনিতেই পুরসভাকে কর প্রদাণ করে ৷ এছাড়া প্রত্যেক নাগরিকই সরকারকে কর দেন। তার বিনিময়ে পরিষেবা মেলে। পুজোর সময়ে গঙ্গা সাফাই করে সেই পরিষেবাই দেওয়া হয়। প্রতিটি উৎসবে তো আলাদা ভাবে কর বসানো সম্ভব নয়। পুরকর্তাদের অনেকে বলছেন, গঙ্গা সাফ রাখা প্রশাসনের কাজের মধ্যেই পড়ে।