২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনের পর স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল বাংলায় তৃণমূলকে শুধুমাত্র বিজেপিই টক্কর দিতে পারবে। গত ১০ বছর ক্ষমতায় থাকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে উৎখাত করার জন্য বিজেপি কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলা জয় ছিনিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর। বঙ্গ বিজেপির নেতারা রাজ্যের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে ঘুরে বেরাচ্ছেন। বিজেপির কেন্দ্রীয়, রাজ্য নেতারা নির্বাচনের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু গ্রাউন্ড লেভেলে যাঁরা বিজেপিকে মজবুত করছেন, তাঁদের খুব কম মানুষই চেনেন। সংবাদ মাধ্যমে তাঁদের খুঁজে পাওয়া যায় না। তাঁরা কাজ করে চলেছেন তৃণমূল স্তরে।
advertisement
বিজেপিতে রাষ্ট্রীয় সহ-সংগঠন মন্ত্রীর দায়িত্ব সামলানো শিব প্রকাশ বিগত কয়েক বছর ধরে চুপচাপ বাংলায় কাজ করে চলেছেন। ১৯৮৬ সালে সঙ্ঘের প্রচারকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন শিব প্রকাশ। এরপর থেকে তিনি সেই দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। ২০১৪ সালে খাতায়-কলমে বিজেপিতে যোগ দেন শিব প্রকাশ। প্রথমে তাঁকে ওড়িশার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁর ওপর ভরসা করতে শুরু করে গেরুয়া শিবির। এরপর বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব শিব প্রকাশকে পশ্চিমবঙ্গে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। রাজ্যে আসার পর কয়েক মাসের মধ্যেই ওনাকে বাংলার সংগঠনের প্রধান বানানো হয়। রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের তরফ থেকে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর ওনাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা শিব প্রকাশ কর্মঠ আর জেদি মানুষ। রাজ্যে দলকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাও শিখে নিয়েছেন তিনি। গ্রামে গঞ্জে থাকা সাধারণের থেকে অতি সাধারণ মানুষের কাছে বিজেপির নীতি আদর্শ পৌঁছে দিচ্ছেন স্থানীয় ভাষার সাহায্যে। বাংলার গ্রামে গঞ্জে ঘুরে ঘুরে মানুষকে বোঝাচ্ছেন। ২০১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গে আসার পর বুথ লেভেলে কাজ করা শুরু করে শিব প্রকাশ। ৭৮ হাজারের বেশি বুথে দলের কমিটি গঠন করেন। আর সেই পরিণাম ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে বঙ্গে বিজেপির অভূতপূর্ব সাফল্যে ধরা পড়ে।
RSS -এর অপর সৈনিক অরবিন্দ মেনন। স্বল্পভাষী মেনন বারাণসীর মালয়লি নাইয়ার। তবে তিনিও সাবলীলভাবে বাংলা ভাষায় কথা বলেন। বিজেপি যুব মোর্চার সদস্য হিসাবে বাংলায় আসা মেনন ইতিমধ্যেই হাতের তালুর মত চিনে ফেলেছেন বাংলার অলি-গলি। ব্যাপকভাবে চষে বেড়িয়েছেন প্রান্তিক গ্রামগুলিতে। শোনা যায় ২০১৩-র গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন এই মেনন। তিনি দলের পুরাতন এবং নতুন সদস্যদের মধ্যের ব্যবধান কমিয়ে রাজ্য বিজেপিকে সংঘবদ্ধ করতে কাজ করছেন মেনন।
গত বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ২১১ টি আসনে জয়লাভ করেছিল। বিজেপি মাত্র ৩ টি আসন পেয়েছিল। সেই ৩ আসন পাওয়া বিজেপিই এখন রাজ্যে ক্ষমতায় আসার সবথেকে বড় দাবিবার হতে চলেছে। আর তার নেপথ্যের নায়ক, শিব প্রকাশ, অরবিন্দ মেননদের মতো সৈনিকরা। উনিশের লোকসভা নির্বাচনে ইতিহাস তৈরি করে বিজেপি এরাজ্যে ১৮ টি আসনে জয়লাভ করে। তাদের স্লোগান হয়েছে, "উনিশে হাফ, একুশে সাফ"। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে ঊনিশের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয় কিনা সেদিকে নজর এখন গোটা বাংলার। কারণ টক্কর যে জোরদার সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না।