তাঁর স্পষ্ট স্বীকারোক্তি, ‘দোকান থেকে সাধারণ মানুষ কাপ, কোণ যেই আইসক্রিমই কিনে খান না কেন সেটা আমার কাছে স্বাস্থ্যসম্মত নয়। স্বাদ আর আকর্ষণের প্রতিযোগিতায় অনেক বেশি কেমিক্যাল ব্যবহার হয় এই সমস্ত আইসক্রিমে। আমি যেই আইসক্রিম গুলোবানাই তাতে বলতে পারেন ৯৯ শতাংশই ফলের রস থাকে। স্বাদের জন্য শুধু একটু চিনি দিতে হয়’।
advertisement
আরও পড়ুন: স্বামীকে দিয়েছেন নিজের কিডনি! অসুস্থতাকে সঙ্গী করেই এগোচ্ছেন লড়াকু পিঙ্কি
প্রায় ৬০ রকম ফল দিয়ে আইসক্রিম বানিয়েছেন যাদবপুরের এই গবেষক। আম, জাম, আঙুর, সবেদা, কমলালেবু, কামরাঙা, কাঁঠাল, ডাব, আতা, আনারস, তরমুজ, লিচু কী নেই সেই তালিকায়। বাড়িতেই ল্যাব তৈরি করে নিয়েছেন নিজের মতো। সংবাদপত্রে অ্যাসিস্ট্যান্টের জন্য বিজ্ঞাপন দেন। যাঁরা এসেছে নিজের হাতে করে ট্রেনিং দিয়েছেন তাঁদের। সারাদিন বাড়িতেই অ্যাসিস্ট্যান্টদের নিয়ে গবেষণা চালান নিজের মনে। কখনও কখনও অনলাইনে ক্লাস করান রাজ্যের বাইরে থাকা বিভিন্ন ছাত্রদের।
তবে নয়া এই আইসক্রিমের পিছনে রয়েছে এক অন্য গল্প। ২০০৪-০৫ সালে এক কৃষক নেতা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অশোকনাথ বসুর কাছে এসেছিলেন চাষীদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে। তাঁর দাবি ছিল, চাষীরা ফল উৎপাদন করছে কিন্তু তা সাধারণ মানুষের পৌঁছানো যাচ্ছে না, বাজারজাত করা যাচ্ছে না। যদি তাঁরা কিছু একটা করতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের থেকে সেই ভাবনা আসে তৎকালীন সহ উপাচার্য প্রফেসর সিদ্ধার্থ দত্তের কাছে। দুজনে মিলে তারপর যোগাযোগ করেন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সঙ্গে। সেই শুরু গবেষণা। অসীমবাবু বলেন, ‘প্রথমে আমরা আবিষ্কার করেছিলাম ঠিকই। কিন্তু বাইরের মানুষের কাছে আমরা তা পৌঁছে দিতে পারিনি। তখন ছাত্রদেরই বিনামূল্যে খাওয়াতে শুরু করি। দিন কয়েকের মধ্যে এর কথা এত ছড়িয়ে পড়ে যে অন্যান্য কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও ছাত্রছাত্রীরা আসত এই আইসক্রিম খেতে’।
বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রোজেক্ট বন্ধ হয়ে গেলেও সাধারণ মানুষের কথা ভেবে রিটায়ার করার পর নিজের বাড়িতে আবার গবেষণা শুরু করেন অসীমবাবু। এখন প্রায় একশোর উপর দোকানে পৌঁছে যায় তাঁর এই আইসক্রিম। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপকের বাড়িতে গোটা একটা ঘর জুড়ে স্টোররুম রয়েছে। কাঁচামাল থেকে শুরু করে ফলের বাজার করা, আইসক্রিম বানানো থেকে বাজারে পৌঁছানোর খরচ অনেকটাই। পাশাপাশি অন্যান্য গবেষণার চাপ। সব মিলিয়ে বিজ্ঞানের জগতেই দিন কাটান যাদবপুরের এই গবেষক। চিন্তা রয়েছে একটাই, কিভাবে পরিবেশকে সুস্থ রাখা যায়, সাধারণ মানুষকে সুস্থ রাখা যায়।