তুই বেঁচে থাকতে হয়তো কোনওদিনও তোর কথা ভাবিনি। কিন্তু কেন জানি না তোকে খুব মিস করছি। তুই কোথায় আছিস?
কয়েক বছরের বড় সাগর মণ্ডলের উদ্দেশ্যে ডায়েরিতে এমনই নানা কথা লিখেছে হরিণঘাটার দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র সৌমিত্র ঢালি। লিখেছে আরও অনেক যন্ত্রণার কথাও। রবিবার রাতে বিষ খায় সৌমিত্র। কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা ধরে চলে যমে-মানুষে টানাটানি। সোমবার মৃত্যু হয় সৌমিত্রর।
advertisement
দূর সম্পর্কের আত্মীয়। একই পাড়ায় বাড়ি। পড়াশোনাও একই স্কুলে। ইনজিনিয়ারিং পড়তে মোহনপুরের IISER-য়ে যায় সাগর মণ্ডল। সেখানেই হস্টেলের শৌচাগার থেকে উদ্ধার হয় তার ঝুলন্ত দেহ। তিন সহপাঠীর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করে পরিবার। এই ঘটনা মেনে নিতে পারেনি সৌমিত্র। সেই শোকেই আত্মঘাতী। দাবি পরিবারের।
সৌমিত্রর ঘর থেকে পাওয়া ডায়েরির প্রতি পাতায় সাগরের মৃত্যু মেনে নিতে না পারার যন্ত্রণা।
‘সাগরদা, তোর কথা খুব মনে পড়ছে। তুই বেঁচে থাকতে হয়তো কোনওদিনও তোর কথা ভাবিনি। কিন্তু কেন জানি না তোকে খুব মিস করছি। তুই কোথায় আছিস?
মা সবসময় ভাল কোনও প্রসঙ্গ যেমন, খেলাধূলা, পড়াশোনা, এমনকী মাছ ধরা প্রভৃতি বিষয়গুলি বলার সময় প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসাবে তোর কথা বলত। এখন তুই আমাদের মধ্যে থেকেও নেই। তাই মা কাকে উদাহরণ দিয়ে ভাল কাজে উৎসাহিত করবে তুই বল? তাই আমি স্থির করেছি যে তুই যেখানে আছিস আমি তোর কাছে যাব।
সাগরদার কথা খুব মনে পড়ছে। খুব কষ্ট হচ্ছে। তাই আমি সাগরদার কাছে চললাম....।
ইতি
তোমাদের স্নেহের পুত্র
সৌমিত্র
"এ ঘর আমার নয়। এ জীবন আমার নয়। রাত পোহালে মুছে যাবে আমার পরিচয়। "
কাপুরুষ কেউ নিজে হয় না। পরিস্থিতি ও চারদিকের পরিবেশ তাকে কাপুরুষ করে তোলে। এর ফলস্বরূপ মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়, কোনও পথ খুঁজে না পেয়ে ।"
শুধুই কী সাগরের মৃত্যু মেনে নিতে না পারা? না কী এর পিছনে অন্য কোনও রহস্য? বুঝতেই পারছেন না প্রতিবেশিরা।
সাগরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল না। তবু মেধাবী সাগরকে সম্মান করত সৌমিত্র। নিজে মেধাবী না হলেও সৌমিত্রর হাতের কাজ ছিল নিপুণ। চাপা, শান্ত স্বভাবের সেই ছেলের কেন এই চরম পরিণতি? জবাব দেওয়ার আজ আর কেউ নেই।