আরও পড়ুন: সারিবদ্ধ শুকনো গাছের কঙ্কাল, কী কারণে প্রকাণ্ড গাছ গুলি শুকিয়ে যাচ্ছে?
নেশাটা ধরেছিল অবশ্য বছর ষাটেক আগে। বম্বের এক শিল্পীকে বাজাতে দেখে তারই কাছ থেকে হজরত জোগাড় করেছিল জিভ বাজি। সেই বাঁশিই একটা সময়ে নেশা ধরে গিয়েছিল। শরীরের একটা অঙ্গের মতোই মুখের ভিতর সারাদিন ওই জিভ বাজি পুড়ে গান গাইতেন যুবক হজরত। একটা সময় সেই নেশাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন তিনি। পিতলের বদলে লোহার চাকতি ফুটো করে সেই বাঁশি বানানো শুরু করেন। বাজানোর পাশাপাশি সেই বাঁশি বিক্রিও করতেন তিনি। বিয়ে করে সংসার করেন। ছেলেপুলে মানুষ করেন। সম্প্রতি পাঁচ লক্ষ টাকা খরচ করে স্ত্রীর চিকিৎসাও করান হজরত। নিজের এক ছেলে এই শিল্পটা শিখলেও পেশা হিসেবে বেছে নেয়নি। তবে হজরতও নেশা ছাড়েননি। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত এই শিল্পটাকে বাঁচিয়ে রাখতে চান হজরত। গেয়ে চলেন "ইয়ে দোস্তি হাম নেহি তোড়েঙ্গে। ছোড়েঙ্গে দম মাগার তেরা সাথ না ছোড়েঙ্গে।"
advertisement
আরও পড়ুন: জলের লাইন খুঁড়তে গিয়ে এ কী কাণ্ড! নবাবের শহর মুর্শিদাবাদ তোলপাড়...
ডালহৌসিতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তাপস রায়। তিনি বলেন, "বহু বছর ধরে এনাকে বাঁশি বাজাতে দেখছি। কী অদ্ভুত ভাবে বাজিয়ে চলেছেন। একটা টিনের চাকতি কেটে বাঁশি বানিয়েছেন। আর তাতে কী সুন্দর সুরেলা শব্দ। কত ভালো ভালো গান নিখুঁত ভাবে তুলেছেন। এত প্রতিভা স্বত্বেও মানুষটা কোনও স্বীকৃতি পেল না।"
ব্যবসায়ী দীপঙ্কর শীল বলেন, "মাঝেমধ্যেই দেখি এই লোকটা বাঁশি বাজাচ্ছেন। কিন্তু কোনও দিন সেই বাঁশি দেখতে পেতাম না। একদিন দেখতে চেয়েছিলাম। মুখের ভিতর থেকে বের করে দেখিয়েছিলেন। আগে অনেক গান করতেন। এখন বেশি পারেন না। শ্বাসকষ্ট হয় বলে। অর্থকষ্ট রয়েছে। এই বয়সেও বেরোতে হয় রোজগারের জন্য। এই রকম লুপ্তপ্রায় শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এরকম শিল্পীদের পুরষ্কৃত করা উচিত।"
অনেক পাওয়া না পাওয়ার মধ্যেও শিল্পী রয়েছেন নিজের শিল্পকে আঁকড়ে ধরেই। তিনি বলেন, "নিজের সবচাইতে প্রিয় জিভ বাঁশি নিয়ে ভালোই আছি। আর কে কী দেবে সেটা বড় কথা নয়। এই জিভ বাঁশিই গত পঞ্চাশ বছর ধরে পেটের ভাত জুগিয়ে যাচ্ছে। এখনও এটাই ভাত দিচ্ছে। আমি যেমন আমার শিল্প বাঁচিয়ে রেখেছি। তেমনই আমার শিল্পও আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে।"
UJJAL ROY