#কলকাতা: সাংবিধানিক পদে থাকতে হলে সংবিধানকে মানতে হবে। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি জানালেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় । বুধবার অবশেষে মুখ্য সচিব এবং ডিজি-র সঙ্গে ৭৫ মিনিটের বৈঠক করেন রাজ্যপাল। বৈঠক শেষে তিনি জানিয়ে দেন, ‘সাংবিধানিক পদে যারা আছেন তারা আইন মানতে বাধ্য।’ তিনি আরও বলেন, ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে কারোর কোন ক্ষতি হবে না।’ তিনি অবশ্য মুর্শিদাবাদ মালদার মতো ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাগুলিতে যেতে চান বলেও বৈঠকে ডিজি এবং মুখ্যসচিবকে জানিয়েছেন।
advertisement
গত সপ্তাহে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আইনে পরিণত হয়েছে। এদিকে নাগরিকত্ব আইন এবং এন আর সির প্রতিবাদে মিছিল করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার থেকে বুধবার টানা তিনদিন কলকাতা জুড়ে এবং হাওড়া থেকেও মিছিল করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ।আর মুখ্যমন্ত্রীর মিছিল নিয়ে সরাসরিভাবে রাজ্যপাল কিছু না বললেও সংবিধান মানার কথা তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন। তিনি এদিন বলেন, সাংবিধানিক পদে থেকে সংবিধান মানতে সবাই বাধ্য। কার্যত মুখ্যমন্ত্রীর মিছিলের উত্তর এদিন দিয়ে দিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে রাজ্যপাল ও জানান ‘কোন রাজনীতিক কী করবেন, কীভাবে আন্দোলন করবেন সেটা তাদের ব্যাপার। তিনি রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান তাই তিনি আইন মানতে বাধ্য।’
বুধবার রাজ্যের মুখ্য সচিব ও ডিজির সঙ্গে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন।গত সপ্তাহে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আইনে পরিণত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যের একাধিক জায়গায় অশান্তির পরিবেশ তৈরি হয়েছে । কোথাও রেল স্টেশন ভাঙচুর, আবার কোথাও রাস্তা জ্বালিয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে পথ অবরোধ, আবার কোথাও ট্রেনে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া একাধিক জেলায় এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। এর জেরে বেশ কিছু জেলাতেও ইন্টারনেট সংযোগ পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কি তা জানার জন্য রবিবার থেকেই মুখ্যসচিব ও ডিজি-এর সঙ্গে বৈঠকে আগ্রহী ছিলেন রাজ্যপাল। সোম ও মঙ্গলবার বৈঠক না হলেও অবশেষে বুধবার দ্বিতীয় মুখ্য সচিবের সঙ্গে ৭৫ মিনিট বৈঠক সারলেন রাজ্যপাল। বৈঠকে মুখ্য সচিব এবং ডিজির রিপোর্টে সন্তোষ প্রকাশ করেন রাজ্যপাল। এ দিনের বৈঠকে কোন কোন জেলায় কি ধরনের অশান্তি হয়েছে কারা কারা অশান্তি করছেন বিস্তারিতভাবে খোঁজখবর নেন তিনি। শুধু তাই নয়, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে সাধারণ মানুষের কী ভাবনা? কোথাও কোনও গুজব রটানো হচ্ছে নাকি? তাও এদিন তাদের থেকে জানতে চান রাজ্যপাল।
বৈঠক শেষে অবশ্য রাজ্যপাল জানিয়েছেন ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে অনেক ভুল বোঝানো হচ্ছে। এই আইন কারোর ক্ষতি করবে না। যারা ভুল বোঝাচ্ছেন তাদের খুঁজে বের করতে বলেছি মুখ্য সচিব এবং ডিজিকে।’
বুধবারের বৈঠকে তিনি মুর্শিদাবাদ এবং মালদহতেও যেতে চান বলে জানিয়েছেন মুখ্য সচিব এবং ডিজিকে। বৈঠকে মালদা মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি নিয়ে তিনি যে উদ্বিগ্ন তাও এদিন ডিজি এবং মুখ্যসচিবকে বলেন রাজ্যপাল। এ দিনের বৈঠকে কোন কোন জায়গায় বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এখনো পর্যন্ত কি অবস্থা রয়েছে তা বিস্তারিত ভাবে জেনে নেন রাজ্যপাল।বৈঠকে উপস্থিত থেকেই মুখ্যসচিব রাজ্যপালকে জানান পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই রাজ্য সরকারি রাজ্যপাল কে নিয়ে যাবে মুর্শিদাবাদ,মালদহর মতো ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাগুলিতে।তবে বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে অবশ্য রাজ্যপাল এখন পরিস্থিতি শান্ত করার পক্ষেই সওয়াল করেছেন।তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন ‘এখন আমাদের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার পথে নিয়ে যেতে হবে কোনো গর্ত খোঁজার দরকার নেই।’
সোমবার থেকেই মুখ্য সচিব ও ডিজি না আসায় বারবারই ট্যুইট করে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন রাজ্যপাল জাগদীপ ধনকার। রবিবার সন্ধ্যে তেই রাজ্যপাল তলব করেছিলেন মুখ্য সচিব ও ডিজিকে সোমবার সকাল দশটার সময় তাদের আসার জন্য বলেছিলেন রাজভবনে। প্রথমে সোমবার তারপরে মঙ্গলবার না আসায় টুইট করে নিজের হতাশা প্রকাশ করেছিলেন রাজ্যপাল। শেষমেষ বুধবার আশায় মুখ্যসচিব ও ডিজির রিপোর্টকে একপ্রকার প্রশংসা করলেন। প্রশংসার পাশাপাশি শান্তি রক্ষায় তাদের কাজকেও ভালো রিপোর্ট দিলেন রাজ্যপাল।