এরকমই একজন যাত্রী অর্পিতা দাস। সোমবার থেকে শহরে সরকারি বাস ঘনঘন মিলবে। এই আশ্বাস পাওয়ার পর সকাল সাতটার সময় বাড়ি থেকে বেরিয়ে ডানলপে আসেন বাস ধরতে। তাঁর গন্তব্য দক্ষিণ কলকাতা৷ এসে যে ছবি প্রত্যক্ষ করলেন তা দেখে চক্ষু চড়ক গাছ ওই যাত্রীর। বাস ধরতে আসে যাত্রীদের লাইনের শেষ কোথায় খুঁজে পাচ্ছিলেন না অর্পিতা। তাও ধৈর্য ধরে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়ান তিনি। প্রায় আড়াই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও লাইনের মুখে পৌঁছাতে ঢের দেরি দেখে শেষ পর্যন্ত বাড়ি ফিরে যান তিনি।
advertisement
সরকারি নির্দেশিকা মেনে একটি বাসে কুড়ি জন যাত্রীর বেশি ওঠার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকায় দীর্ঘক্ষণ লাইনেই সময় কেটে যাচ্ছিল । তাঁর দাবি, এমনিতেই কলকাতার যা জনসংখ্যা সেই তুলনায় সরকারি বাস কিংবা বেসরকারি বাস মিলিয়েও যাত্রীদের চাপ থেকেই যায়। তাই অবিলম্বে সরকারের উচিত বেসরকারি বাস পরিষেবা চালু করার । স্বাভাবিক সময়ে যাত্রী হয়রানির শিকার হতে হয় অনেককেই । তার ওপর যদি বর্তমানে বেসরকারি বাস একটিও রাস্তায় না নামে তাহলে যে কী করুণ অবস্থা হবে তা সোমবারই হাড়ে হাড়ে টের পেলেন যাত্রীরা ।
প্রসঙ্গত রাজ্য সরকারের তরফে বেসরকারি বাস পরিষেবা শুরুর কথা বলা হলেও বাস মালিকরা বেঁকে বসেন ভাড়া নিয়ে। তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেন একটি বাসে সামাজিক দূরত্বের কথা ভেবে মাত্র কুড়ি জন যাত্রী নিয়ে পুরোনো ভাড়ায় বাস পথে নামানো কোন অবস্থাতেই সম্ভব নয়। বাস মালিকদের তরফে লোকসানের প্রসঙ্গ টেনে সরকারের দ্বারস্থ হলে রাজ্য সরকার ভাড়ার বিষয়টি বর্তমান সময়ে মালিকদের ওপরই ছেড়ে দেয়। মালিকদের সংগঠন আলোচনা ক্রমে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করেন। কিন্তু পরিবহন দফতর যে ভাড়ার তালিকা বাস মালিকরা করেছেন তাতে আপত্তি জানায়। পরিবহন দফতরের তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয় কোনও ভাড়া বাড়ানো যাবে না। আর এরপরই বেসরকারি মালিকরা রাস্তায় বাস নামানোর ব্যাপারে বেঁকে বসেন।
এই পরিস্থিতিতে রাস্তায় বাস পরিষেবা তাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয় বলে পরিবহন দফতরকে সাফ জানিয়ে দেন মালিকদের সংগঠন। যার জেরে পথে সরকারি বাসের দেখা মিললেও বেসরকারি বাস পুরোপুরি বন্ধ থাকে । চরম হয়রানির শিকার হতে হয় যাত্রীদের । সোমবার এরকম অভিজ্ঞতা হল কলকাতা শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের হাজার হাজার যাত্রীর। সোমবার থেকে বেশ কিছু ক্ষেত্রে শিথিলতার জেরে অনেকেই অফিস যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন আবার কেউ বাইরে যান নিজেদের প্রয়োজনীয় কাজ সারতে। তবে বাসের দেখা না মেলায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন অনেকেই। অনেকের দাবি সরকারের তরফে বিভিন্ন রুটে ঘনঘন বাস চালানোর কথা বলা হলেও বাস্তবে সরকারি বাসও অমিল। যাত্রীদের দাবি, 'অবিলম্বে ভাড়ার বিষয়টি আলোচনাক্রমে বেসরকারি বাস পরিষেবা যাতে শুরু হয় সে ব্যাপারে সরকাার দৃষ্টি আকর্ষণ করুক'। নচেৎ এই হয়রানি আগামী দিনে আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা নিত্যযাত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ যাত্রীদের।