বৃষ্টির মধ্যে বুধবার ভোরে ১০ নম্বর আহিরিটোলা (Ahiritola Street) স্ট্রিটের দোতলা বাড়িটি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ৷ কলকাতা পুরসভা আগেই বাড়িটিকে ‘বিপজ্জনক’ তকমা দিয়েছিল ৷ কিন্তু দরিদ্র ঘোড়ুই পরিবার বাধ্য হয়েছিল ওই বাড়িতেই থেকে যেতে ৷ বাড়িটি ভেঙে পড়ার পর ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছয় স্থানীয় জোড়াবাগান থানার পুলিশ এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা ৷ প্রথমে উদ্ধার করা হয় পেশায় সিভিক ভলান্টিয়ার সুশান্ত ঘোড়ুইকে ৷ তার পর বাইরে বার করে আনা হয় তাঁর স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা গঙ্গাকে ৷ তখনও ভগ্নস্তূপ বাড়িতে আটকে ছিলেন গঙ্গার মা চম্পা ও ২ বছরের শিশু সৃজিকা ৷
advertisement
দুর্ঘটনার প্রায় ৭ ঘণ্টা পর ভেঙে পড়া বাড়ি থেকে বার করা হয় ছোট্ট সৃজিকাকে ৷ তারও কিছু ক্ষণ পর বার করা হয় সৃজিকার দিদিমা চম্পাদেবীকে ৷
আরও পড়ুন : উদ্ধার করেও শেষরক্ষা হল না, আহিরিটোলায় ধ্বংসস্তুপে আটকে থাকা শিশুর মৃত্যু
ছোট্ট সৃজিকাকে যখন বার করা হয়, তখনই সে অচৈতন্য,নিস্তেজ ছিল। দ্রুত তাকে অ্যাম্বুল্যান্সে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। অন্যদিকে চম্পাদেবীকে ভর্তি করা হয়েছিল আরজিকর হাসপাতালে ৷ বুধবার দুপুরে সেখানে মারা যান তিনিও ৷
আরও পড়ুন : প্রচণ্ড শব্দে কেঁপে উঠল এলাকা, ভেসে আসছে আর্তনাদ, চিৎকার! বৃষ্টির সকালে ভয়ঙ্কর কাণ্ড কলকাতার বুকে...
এক সপ্তাহ আগেই এই আরজিকর হাসপাতালে গঙ্গাকে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের দিন দেওয়া হয়েছিল মঙ্গলবার ৷ সে দিন হাসপাতালে গেলে তাঁর শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে বৃহস্পতিবার সিজার করার ডেট দেওয়া হয়। কিন্তু তার আগেই ঘটে গেল বিপত্তি। ভেঙে পড়া বাড়ি থেকে উদ্ধার করার পর পায়ে আঘাত পাওয়া অন্তঃসত্ত্বা গঙ্গাকে আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই ভর্তি করানো হয়। সেখানে বুধবার বিকেলে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি। ২ কেজি ৮০০ ওজনের সদ্যোজাত শিশুর অবস্থা স্থিতিশীল। অন্যদিকে গঙ্গাকে শারীরিকভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য এইচডিইউ বিভাগে রাখা হয়েছে । তিনি এখনও জানেন, সৃজিকা ভাল আছে ৷
সদ্য সন্তানহারা বাবা সুশান্তকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর চিকিৎসকরা বিকেলে হাসপাতাল থেকে ছাড়েন । প্রাণাধিক প্রিয় দু'বছরের মেয়েকে হারিয়ে তিনি বাকরুদ্ধ । তাঁর ভাই প্রশান্ত ঘোড়ুই বলেন, ‘‘আমাদের গোটা পরিবার ছারখার হয়ে গেল। সৃজিকা চলে গেল, নতুন যে মেয়ে এল, সে আসলে সৃজিকা-ই। নতুন অতিথির আগমনে যেখানে খুশির হাওয়া বওয়ার কথা ছিল, সেখানে আজ এক দমবন্ধ করা শোকের পরিবেশ। আমাদের পরিবার অত্যন্ত গরিব, আগামিদিনে আর মাথা তুলে উঠে দাঁড়াতে পারব কি না, জানি না।’’ সৃজিকার মরদেহ মেডিক্যাল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত করার পর সন্ধ্যায় পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।