রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে যখন ভোটের 'খবর' ভেসে বেড়াচ্ছে, তখন শোভন চট্টোপাধ্যায় যেন নিভৃতবাসে। কিন্তু 'নিউজ 18 বাংলা ডিজিটাল'-এর তরফে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, 'রাজনীতি হল শোভন বাবুর ধর্ম। তাই রাজনীতি থেকে তাঁর সরে যাওয়ার কোনও ব্যাপারই নেই। হ্যাঁ, এখন হয়ত সামনে দেখছেন না। কিন্তু তাঁর রাজনৈতিক জীবন শেষ হয়ে যায়নি। সেরকম কোনও সম্ভাবনাও নেই। শোভন বাবু বাংলার রাজনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করবেন, তা নিয়ে কোনও দ্বিমত থাকতে পারে না।'
advertisement
বৈশাখীর দাবি, বিজেপি কর্মীরা এখনও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, প্রত্যহ কথাও হয়। আর নেতারা? বৈশাখীর জবাব, 'আমার সহকর্মীরা যোগাযোগ রাখছেন। নেতারা নয়।' আপনারা কি বিজেপির মূলস্রোতে ফিরবেন? এক মুহূর্ত না ভেবে শোভন-বান্ধবীর উত্তর, 'সেটা তো সময় বলবে।' কবে হতে পারে এমনটা? বৈশাখীর আর তৃণমূলে ফেরার কোনও সম্ভাবনা? 'না না, তাহলে তো তৃণমূল ছাড়তামই না।'
বিজেপিতে যোগ দিয়েও দীর্ঘদিন নেতৃত্বের সঙ্গে 'মতানৈক্যের' কারণে সক্রিয় হতে পারেননি শোভন-বৈশাখী। শেষমেশ ভোটের মাস কয়েক আগে বৈশাখীকে নিয়ে বিজেপির ব্যাটন ধরে পথে নামেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। শোভনকে কলকাতা জোনের পর্যবেক্ষক আর বৈশাখীকে সহ–আহ্বায়ক করে বিজেপি। কিন্তু সেই 'সুসময়'ও বেশিদিন স্থায়ী হল না। নিজের খাসতালুক বেহালা পূর্ব থেকে লড়তে চেয়েও দল শোভনকে সেই সুযোগ দেয়নি। টিকিট দেওয়া হয়নি বৈশাখীকেও। ফলে অভিমানে বিজেপির দোর থকে নিজেকে সরিয়ে নেন তিনি। বলাবাহুল্য, বৈশাখীও সেই পথেই এগোন।
একসময় শোভনের কাছে গিয়ে বিজেপির শীর্ষ নেতারা বৈঠক করতেন, চেষ্টা করতেন মানভঞ্জনের। তাঁরা কেউ যোগাযোগ করছেন না? অভিমানী যেন বৈশাখীও। জবাব, 'এখন সব নেতারাই ভোট নিয়ে ব্যস্ত আছেন। একজন কর্মী কী করছেন, তা নিয়ে ভাবার চেয়ে তাঁরা অনেক বড় দায়িত্বে অবতীর্ণ হয়েছেন।' কিন্তু শোভন চট্টোপাধ্যায় তো কর্মী নন, বিরাট দায়িত্ব পাওয়া বিজেপি নেতা! বৈশাখীর সাফ কথা, 'বিজেপিতে তো শোভন দা'কে সরায়নি। শোভন দা'র নিজের কিছু অভিযোগ ছিল। তার ভিত্তিতে তিনি নিজে সরে এসেছেন।'
শোভনের সঙ্গে বিজেপির দূরত্ব আদৌ মিটবে কিনা, তার জবাব দেবে সময়। তবে, শোভন-বৈশাখী যে কিছুতেই রাজনীতির ময়দান ছাড়ছেন না, তা স্পষ্ট। কিন্তু বঙ্গ ভোটের উত্তাপ যখন ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র, তখন শুধু যেন গোলপার্কের একটা অ্যাপার্টমেন্ট সেই আঁচ থেকে দূরে, অনেক দূরে। শোভনের ঠিকানায় ভোট নেই, আপাতত ছড়িয়ে রয়েছে অভিমান। সেই অভিমান সরে আবার কবে রাজনীতির আলো পৌঁছবে, তারই যেন অপেক্ষায় 'দাদা'র অনুগামীরা।
