গোটা দেশবাসী, গোটা রাজ্যবাসী বিশেষ করে বাঙালিরা যেন তাকিয়ে আছে পরের বছরের দিকে ৷ করোনার কারণে, এবার অনেকের বহুদিনের প্ল্যান বাতিল করেছেন ৷ দেশ-বিদেশ থেকে আসার এই সময়ে ঘরের ছেলে-মেয়েরা বাধ্য হয়েছেন, কর্মস্থলেই থাকতে ৷ ভিডিও চ্যাটেই অঞ্জলি থেকে প্যান্ডেল হপিং চলেছে ৷ শপিং থেকে শুরু করে পুজোর সব আনন্দেই এবার বিশাল কাটছাঁট৷ সব যেন উশুল করে নেওয়ার প্ল্যান পরের বছরে ৷ করোনা মুক্ত হয়ে আবার যখন গোটা বিশ্ব নিউ নর্মাল থেকে নর্মালে ফিরবে, সেই পুজোর জন্যই এখন শুধুই হাঁ করে বসে থাকা ৷ সঙ্গে আশায় বেঁচে থাকা !
advertisement
সেই আশা নিয়ে দেখে ফেলুন পরের বছরের ক্যালেন্ডার ৷ ছকে ফেলুন এক নিশ্চিন্ত প্ল্যান ৷ মহালয়া থেকেই না হয় পরের বছর শুরু হোক আপনার পুজোর টইটই ৷
পরের বছরে---
মহালয়া- ৬ অক্টোবর, বুধবার
মহাষষ্ঠী- ১১ অক্টোবর, সোমবার
মহাসপ্তমী- ১২ অক্টোবর, মঙ্গলবার
মহাঅষ্টমী- ১৩ অক্টোবর, বুধবার
মহানবমী- ১৪ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার
বিজয়া দশমী- ১৫ অক্টোবর, শুক্রবার ৷
আতঙ্ক, ভয় আর করোনা ৷ এই তিন শব্দকে সঙ্গী করেই, মুখে মাস্ক, হাতে স্যানিটাইজারের বোতল নিয়ে শেষের মুখে বাঙালির সবচেয়ে প্রিয় ও সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজো ৷ যেখানে গোটা শহর, গোটা রাজ্য সেজে ওঠে নতুন আলোয় ৷ গোটা শহর, গোটা রাজ্য নতুন ছন্দে চার-দিন যাপন করে, সেই চারদিনের মহা উৎসব যেন এবার ছিল একেবারেই অন্যরকম ৷ আনন্দের মধ্যেও ছিল অনেকটাই সাবধানতা ও ইতস্তত ভাব ৷ যে উৎসব শুঘু মাত্রই দেবীর আরাধনা নয়, মিলন উৎসব সে উৎসবেই এবার মিলনে বাঁধা ৷ একে অপরের মাঝে সামাজিক দুরত্ব ৷ হাতে হাত না দিয়ে চলা, দূরে বসে কথা বলা ৷ আর ভিড়ের মাঝে না হারিয়ে, বরং ‘একলা’ চলা ৷ এরকম পুজো বাঙালি এর আগে আর কখনও দেখেনি ৷ অতিমারী যে উৎসবের রংকে কিছুটা হলেও আতঙ্কের রঙে ভরিয়ে তুলেছিল, তা গত চারদিনে বাঙালি কিছুটা হলেও দেখে ফেলেছে ৷ যে প্যান্ডেল হপিংয়ের জন্য গোটা বিশ্বে বিখ্যাত এই বাংলা ও বাংলার মানুষ, সেই গতিও এবার ধীমি তালে ৷ কোথাও দশ মিটারের দূরত্ব, কোথাও কুড়ি মিটার ৷ প্যান্ডেলের থিম যেন একা একা দাঁড়িয়ে ৷ তবুও বাঙালির এই উৎসব এবারও ‘নিউ নর্মাল পুজো’র নামকরণে, একেবারে নিজের মতো ৷ সেই নিজের মতো করে থাকার আজ শেষ দিন ৷ আজ মহাদশমী ৷ মাকে বিদায় দেওয়ার পালা ৷ নিউ নর্মালেও এবার বিদায়ের সুরও একেবারে অন্যরকম৷ ঢাকের বাদ্যিতে মা থাকবে কতক্ষণ সুর থাকলেও, সঙ্গে প্রার্থনা, মা তুমি পরের বছর আবার এসো, কিন্তু তাঁর আগে এই বিশ্বকে করোনা মুক্ত করে দাও৷
এবার কী তাহলে কোলাকুলি সম্ভব ? কাছে এসে প্রিয়মানুষকে শুভ বিজয়ার শুভেচ্ছা সম্ভব ? নাকি এখানেও সচেতনা? চিকিৎসকরা বলছেন, এবারটা সব নিয়মই না হয় হয়ে যাক নিউ নর্মালের মত ধরে ৷ এবার না হয়, একটু দূর থেকেই হাত জোড় করে চলুক শুভেচ্ছা বিনিময় ৷ সঙ্গে থাকুক সুস্থ থাকার সচেতন প্রার্থনা ৷ তবেই না আসছে বছর আবার হবে !
