গত মঙ্গলবারই অমর্ত্য সেনকে মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া নথি 'ভুল' বলে দাবি করেছিলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্য়ালয়ের উপাচার্য। এবার তাঁকে তীব্র আক্রমণ করলেন তৃণমূলের সুখেন্দুশেখর রায়। বললেন, "নোবেলজয়ী প্রবীণ নাগরিককে যিনি অপমান করতে পারেন, তাঁর আয়নায় মুখ দেখা উচিত।"
advertisement
গত সোমবারই বীরভূম সফরকালে শান্তিনিকেতনে অমর্ত্য সেনের বাড়ি 'প্রতীচী'তে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেশ কিছুক্ষণ নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের সঙ্গে কথা বলেন, তাঁর বাড়িতে চা-ও খান। সবশেষে, অমর্ত্য সেনের হাতে জমির নথিপত্র তুলে দেন মমতা। তারপরে সাংবাদিক বৈঠক করে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নিন্দায় সরব হতেও দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে।
এরপরেই জমি বিতর্ক নিয়ে ফের তাঁর প্রতিক্রিয়া জানান বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। মুখ্যমন্ত্রীকে বেনজির ভাবে আক্রমণ করে তিনি পাল্টা দাবি করেন, "যে নথিপত্র মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছেন তা ভুল। তার কারণ, এই জমিটা অমর্ত্য সেনের বাবা আশুতোষ সেনের নামে। লিজ জমি কখনও মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের নামে হস্তান্তরিত হয় না। যে তথ্যটা মুখ্যমন্ত্রীর স্তাবকেরা তাঁকে দেননি।"
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী আরও বলেন,"২০০৬ সালে জমির মিউটেশন হয়। জমিটির মিউটেশন বাবদ প্রতি বিঘায় কর অনুযায়ী ১৮ হাজার ৯৪০ তিনি রাজ্যকে দিয়েছেন। ৩৩ ডেসিমেল অনুযায়ী এক বিঘা জমি হয়। যদি অমর্ত্য সেনের কাছে সেই জমিটা থাকত, তাহলে উনি ১৩৮ ডেসিমেলের কর দিতেন। কিন্তু তিনি তো সেটা দেননি। তাই উনি ভাল করেই জানতেন যে ওঁর কতটা জমি আছে। ২০০৬ সালে জমিটার ট্রান্সফার করা হয়। তখন সেই ডকুমেন্ট আমরা রাজ্য সরকারের কাছে পাঠিয়ে দিই।"
উপাচার্যের এহেন মন্তব্যের পরে ফের বিতর্কের আগুনে ঘি পড়ে। শোরগোল পৌঁছে যায় দিল্লিতেও। এ নিয়ে দিল্লিতে থাকা সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, "বিশ্বভারতীর উপাচার্য অপমানিত হয়েছেন বলে মনে করছেন। ওঁর যে মান সম্মানবোধ আছে জেনে খুশি হলাম। যিনি কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতার মদমত্ততায় একজন বিশ্বজয়ী, নোবেলজয়ী প্রবীণ নাগরিককে অপমান করতে পারেন, তাঁর আয়নায় মুখ দেখা উচিত।"
যদিও বিজেপি নেতা এবং সাংসদ দিলীপ ঘোষও পাল্টা আক্রমণ শানাতে ছাড়েননি। তিনি বলেছেন, "জমির দলিল নেই, একথা কেউ বলেননি। উনি অধিক জমি দখল করে রেখেছেন, এমন অভিযোগ উঠেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি আমিন নিয়ে গিয়ে জমি জরিপ করতেন, সেটা ভাল হতো।"
এরপরেই দিলীপের অভিযোগ, আসলে দেওয়া-নেওয়ার রাজনীতি চলছে। তাঁর দাবি, " অমর্ত্য সেনকে দিয়ে ছবি ভাল করার চেষ্টা করছেন। ভোট পাওয়ার চেষ্টা করছেন।অমর্ত্য সেনও কিছু পাওয়ার জন্য ওঁকে সার্টিফিকেট দিচ্ছেন। পেলেনও। ওঁকে নাকি জেড প্লাস ক্যাটেগরির নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। কী দরকার ওঁকে নিরাপত্তা দেওয়ার। কে শত্রু আছে ওঁর। কেউ শত্রু নেই। উনি নিজে বিতর্কে জড়িয়েছেন।"