দীর্ঘদিন ধরেই ওই হীরের আংটি পোস্তা রাজপরিবারের অন্যতম মূল্যবাণ সম্পদ ছিল। এর সঙ্গে জড়িয়েছিল পরিবারের মর্যাদাও। আজ থেকে ২০ বছর আগেও ওই হীরের আংটির মূল্য ছিল প্রায় দেড় কোটি টাকা। আংটির আসল দাম জানতে উদগ্রীব ছিলেন পরিবারের বহু সদস্যই। অবশেষে, আংটির মূল্য জানতে এক ভ্যালুয়ারকেই বাড়িতে ডেকে পাঠান রাজ পরিবারের সদস্য প্রণব রায়।
advertisement
আরও পড়ুন: ছুটোছুটি নয়, ভোটের দিন বাড়িতেই প্রদ্যোৎ, কুলদেবতার পুজো দিয়ে গেলেন ভোট দিতে
কিন্তু, সেটাই বোধহয় ছিল খাল কেটে কুমির আনা। আদালত ও পুলিশ সূত্রে খবর, এরপর প্রণবের বাড়িতে এক শাগরেদকে নিয়ে হাজির হয় ভ্যালুয়ার ইন্দ্রজিৎ তপাদার। অভিযোগ, সেই সময়েই প্রণবকে রিভালভার দেখিয়ে শাগরেদের সাহায্যে হীরের আংটি নিয়ে চম্পট দেয় সে।
পোস্তা রাজপরিবারের কাছ থেকে আংটি চুরির অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামেন তৎকালীন ডিসি সেন্ট্রাল জুলফিকার হাসান। পোস্তা থানার তদন্তকারী অফিসার প্রতাপ বিশ্বাস পুলিশ বাহিনী নিয়ে যাদবপুরের বিক্রমগড় থেকে গ্রেফতার করে ইন্দ্রজিৎ ও তার এক শাগরেদকে।
আরও পড়ুন: বিজেপি-ও 'ভয়' পায় এই 'রাজা'কে! রইল ত্রিপুরার 'কিং'-এর 'কিং মেকার' হয়ে ওঠার কাহিনি
অভিযোগকারীর আইনজীবী কৃষ্ণচন্দ্র দাস জানান, ইন্দ্রজিৎকে জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, তাঁর বিক্রমগড়ের বাড়িতে সুইচবোর্ডের মধ্যে হীরের আংটি লুকিয়ে রাখা রয়েছে। তারপর সেখান থেকেই পোস্তা রাজবাড়ির আংটি উদ্ধার করে পুলিশ। টি আই প্যারেডে ইন্দ্রকে চিনতে পারে রাজপরিবারের প্রণব। কিন্তু অপর শাগরেদকে চেনা যায়নি। ফলে চার্জেশিটে নাম ছিল মূল অভিযুক্ত ইন্দ্রজিতের। কিন্তু, ২০১১ সালে ৩০ এপ্রিল সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে নির্দোষ প্রমাণিত হন ইন্দ্রজিত।
কিন্তু এরপরে শুরু হয় আরেক সমস্যা। বহুমূল্য হীরের আংটি আদতে কার, তা নিয়ে শুরু হয় জটিলতা। একাধিক পূর্বসূরি ওই হীরের আংটির উপরে নিজেদের দাবি জানান। ওই আংটি-র উপরে দাবি জানান অভিযুক্ত ইন্দ্রজিৎও । তখন ইন্দ্রজিতের ওই দাবিকে চ্যালেঞ্জ করে প্রধান বিচারকের কাছে পাল্টা মামলা করেন অভিযোগকারী প্রণব রায়।
অবশেষে সেই মামলার রায় বেরল গত বুধবার। অভিযুক্ত ইন্দ্রজিত তপাদারকেই দোষী প্রমাণিত হল ব্যাঙ্কশাল আদালত। ব্যাঙ্কশাল ৬ মেট্রোপোলিটন মেজিস্ট্রেট শ্রীপর্ণা রাউত নির্দেশ দেন, দোষীর ২ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও সঙ্গে ৫০০০ টাকা জরিমানা হবে, জরিমানা অনাদয়ে ৬ মাসের জেল। হীরের আংটির রহস্য উদ্ঘাটন ও দোষী সাবস্ত হওয়ায় খুশি রাজবাড়ির পরিবারের সদস্যরা। তবে দোষী সাব্যস্ত হলেও ইন্দ্রনাথের জামিনের আর্জি মঞ্জুর করেছে আদালত।
ARPITA HAZRA