অসুস্থ শরীর নিয়ে আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, "মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষকে অনেক অনুরোধ করেছিলাম কটা দিন সময় দিতে। কিছুটা সুস্থ হলেই বাড়ি ছাড়ার কথাও বলেছিলাম । কিন্তু ওরা ওসব কিছুই শুনতে চাইল না। বলল, আজই বাড়ি ছাড়তে হবে "।
স্বামীর শারীরিক অবস্থা নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন অসুস্থ এই প্রবীণ নাগরিকের স্ত্রী দীপ্রাদেবী। তাঁর চোখে মুখেও দুশ্চিন্তা আর আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট । মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের এই অমানবিকতা নিয়ে সরব হন অনেকেই। ডায়ালিসিসের পরপরই অসুস্থ বাবাকে নিয়ে সপরিবারে হোটেলে চলে আসেন সৌরভ ধোনি। বললেন, বাড়ি খালি করার নোটিশ না নিয়ে কটা দিন অসুস্থ বাবাকে বিশ্রাম নেওয়ার কথা মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষকে বললেও ওরা আমাদের বাড়ির দেওয়ালে সেই নোটিশ লাগিয়ে আজই ঘর খালি করতে হবে বলে চলে যান।
advertisement
তাঁর দুশ্চিন্তা, "আগামীকাল মঙ্গলবার ফের বাবার ডায়ালিসিসের দিন ধার্য করেছেন চিকিৎসকরা। কীভাবে যে কী করব এখন তা ভেবেই কূলকিনারা পাচ্ছিনা "। শিবাজীবাবুর ছেলে সৌরভের প্রশ্ন , বাবার চিকিৎসায় বিভ্রাট হলে তার দায় কে নেবে ? পাশাপাশি তাঁর দাবি , " প্রতিবেশী এক মহিলা মারণ রোগ ক্যান্সারে আক্রান্ত । তাঁকে বাড়িতে থাকার অনুমতি দেওয়া হল। অথচ আমাদের আবেদনে সাড়া দিল না কে এম আর সি এল "।
প্রথম পর্যায়ের মত মেট্রোর দ্বিতীয় পর্যায়েও কোনও বিপর্যয় নেমে আসবে না তো ? অক্ষত থাকবে তো বাড়ি ? একদিকে এই প্রশ্ন যেমন ভাবাচ্ছে পরিবারকে , তেমনি পরিবারের প্রবীণ মানুষ যিনি কিডনির সমস্যায় ভুগছেন সেই শিবাজীবাবুকে নিয়েও এখন চিন্তার শেষ নেই চৈতন সেন লেনের ধোনি পরিবারের । যদিও কেএমআরসিএল তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অমানবিকতার অভিযোগ প্রসঙ্গ এড়িয়ে শুধু জানিয়েছে, মানুষজনের নিরাপত্তার কথা ভেবেই আমরা বাড়ি খালি করে ওঁদের মত অনেককেই হোটেলে রাখার ব্যবস্থা করেছি।ওই এলাকার ভূগর্ভস্থ টানেলের কাজ শেষ হলেই নির্ধারিত সময়েই সবাইকে বাড়ি ফিরিয়ে দেব "। অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সচেতন কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেড বা KMRCL ।
প্রথম পর্যায়ের কাজের সময় যেভাবে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছিল একের পর এক বাড়ি। সেই সময় বাসিন্দাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে বাড়ি ছেড়ে হোটেলে রাখার ব্যবস্থা করা হয় মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে । প্রথমে ফাটল । তারপর হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে একের পর এক বাড়ি। মাস ছয়েক আগের ভয়াবহ স্মৃতি আজও টাটকা বউবাজারের বাসিন্দাদের কাছে। ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো টানেল তৈরি করার সময় তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছিল একাধিক বাড়ি। এরপরই থমকে যায় মেট্রো প্রকল্পের কাজ। অবশেষে হাইকোর্টের নির্দেশে ফের জোরকদমে শুরু হয়েছে টানেল তৈরির কাজ। নতুন করে বিপর্যয়ের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে আরও বেশি সতর্ক কেএমআরসিএল।
আগের থেকে অর্ধেক গতিতে এগোচ্ছে কাজ। টানেল বোরিং মেশিনে বসানো হয়েছে বিশেষ সেন্সর। যাতে কোনো রকম বিপদ এলেই মিলবে আগাম সঙ্কেত। টানেলের জল লিকেজ আটকাতেও নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। তাই এবার চটজলদি নয় , প্রথম পর্যায়ের বিপর্যয়ের পর অনেকটাই সাবধানী এখন মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেড। তবে এত সবের পরেও আতঙ্ক কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না বউবাজারকে । সেই সঙ্গে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের জন্য নতুন করে বেশ কয়েকটি পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে এলাকা খালি করার কারণে বেড়েছে দুর্ভোগও। যেমন চরম দুর্ভোগে পড়েছেন চৈতন সেন লেনের কিডনির সমস্যায় অসুস্থ শিবাজী ধোনি। তবে শুধুমাত্র শিবাজীবাবু বা তাঁর পরিবারই নয় , এমন অনেক পরিবারই আছে যারা নানান সমস্যায় জর্জরিত। প্রত্যেকেই বলছেন, ' নিজের বাড়িতে ফিরতে চাই '। কবে নিজেদের ভিটেতে ফিরতে পারবেন তাঁরা ? প্রশ্ন আছে। তবে সঠিক উত্তর এখনও অজানা ।