মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আগে কলকাতায় ১০০টা ওয়ার্ড ছিল৷ এখন ১৪৪টা৷ কারণ ২০০৯ সালে ডিলিমিটেশন হয়েছিল৷ এটা নির্বাচন কমিশন ভেবেছে? বিএলও-দের গালাগালি দেওয়ার আগে তাঁদের ট্রেনিং দিয়েছিলেন? চাইলে আমার গলা কেটে দিতে পারেন৷ কিন্তু আমি মানুষের কথা বলব৷ কাউকে না কাউকে তো মুখ খুলতেই হবে৷”
মমতা এর পর বলেন, “যখন ডিলিমিটেশন হল এক কেন্দ্রের ভোটার অন্য কেন্দ্রে চলে গেলেন৷ আগে ভবানীপুর কেন্দ্রটা ছিল আলিপুর৷ এরকম সব জেলা, সব বিধানসভায় হয়েছে৷ ম্যাপিংটাই তো ভুল, এটা বিরাট ব্লান্ডার৷ ২০০২-এর পর যে সীমানা পুনর্বিন্যাস হয়েছিল, সেটা আপনাদের মাথায় ছিল? ২০০২-এ একজন ভোটার যে ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছিল, আজকে তিনি অন্য ওয়ার্ডের বাসিন্দা৷”
advertisement
‘ওরা তাকে ছিঁড়ে খায়…’! বাংলাদেশে দীপু দাসকে হত্যার আগে শেষ মুহূর্তের ভয়াবহ ভিডিও প্রকাশ্যে!
প্রশ্ন তোলা হয়, ২০০২ সালের পর যে সীমানা পুনর্বিন্যাস বা ডিলিমিটেশন হয়েছিল, তা কি আদৌ মাথায় রাখা হয়েছে? ২০০২ সালে যে ভোটার কোনও নির্দিষ্ট ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছিলেন, সীমানা পরিবর্তনের ফলে আজ তিনি সম্পূর্ণ ভিন্ন ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। সেই বাস্তবতা উপেক্ষা করে ভোটার তালিকা সংশোধন করা হলে স্বাভাবিকভাবেই ভুল ও বিভ্রান্তি বাড়বে—এমনই দাবি ওঠে পুরো বিষয়টি নিয়ে।
বাংলায় কোনও নামের বানানে যেখানে ‘a’ ব্যবহৃত হয়, ইংরেজিতে তা ‘aa’ হয়ে যাচ্ছে। পুরো প্রক্রিয়া ইংরেজিনির্ভর হওয়ায় গরিব ও প্রান্তিক মানুষ এই জটিলতা বুঝতেই পারছেন না। এর ফলেই গুরুতর ভুল হচ্ছে এবং তার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, “৪৬ জনের প্রাণ গিয়েছে। এর দায়িত্ব আপনাদের নিতে হবে।”
ভোটার তালিকা সংশোধনের সময় বাবা-মায়ের নাম না মেলার অভিযোগ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ২০০২ সালে কি সর্বত্র ইনস্টিটিউশনাল ডেলিভারি হত? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তখন বাড়িতে সন্তান জন্ম হত। সেই বাস্তবতা উপেক্ষা করে আজ নথির অমিল দেখিয়ে নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এপিক নম্বর নিয়েও গুরুতর অসঙ্গতির কথা তুলে ধরেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, বহু ক্ষেত্রেই ২০০২ সালের এপিক নম্বরের সঙ্গে বর্তমান এপিক নম্বরের কোনও মিল নেই। এটা কোনও অপরাধমূলক বিষয় নয় বলেও তিনি স্পষ্ট করেন। তাঁর প্রশ্ন, কতজন মানুষ নিজের এপিক নম্বর খুঁজে বের করতে পারবেন? ধরেও নেওয়া যাক ৫০ শতাংশ পারবেন—বাকিদের কী হবে?
খসড়া ভোটার তালিকা থেকে ইতিমধ্যেই ৫৮ লক্ষ নাম বাদ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এখন আবার আরও দেড় কোটি নাম বাদ দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, যা কার্যত কিছু ‘খোকাবাবুদের আবদার’ ছাড়া কিছু নয়। তিনি অভিযোগ করেন, বিজেপির এজেন্টরা নাকি ভোটার তালিকা তৈরিতে প্রভাব খাটাচ্ছে। এমন নির্লজ্জ নির্বাচন কমিশন তিনি আগে দেখেননি বলেও মন্তব্য করেন।
ডিলিমিটেশনের কারণে ওয়ার্ড ও বিধানসভা কেন্দ্রের সীমানা বদলেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই পরিবর্তন যথাযথভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে না। পাশাপাশি তিনি জানান, বেশির ভাগ বিএলও শিক্ষক, যাঁদের সামনে মাধ্যমিক পরীক্ষা রয়েছে। তাঁদের এই সময় অতিরিক্ত চাপ থেকে মুক্ত রাখার আবেদন জানান তিনি।
এ ছাড়াও রাজ্য সরকারকে না জানিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কিছু আধিকারিক নিয়োগ এবং রাজ্যের অফিসারদের অবহিত না করেই অবজারভার নিয়োগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি নির্দেশ দেন, এরা কারা এবং কী ভাবে নিয়োগ হয়েছে, তা খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট তাঁকে দিতে হবে।
