অবশেষে আড়াই মাস বাদে দক্ষিণেশ্বর মন্দির শনিবার থেকে খুলল। মন্দির কমিটির তরফে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল সকাল ৭টা থেকে সকাল ১০ টা ও দুপুর সাড়ে ৩টে থেকে সন্ধে সাড়ে ৬টা --এই দুটি পর্যায় মন্দির খোলা হবে দর্শনার্থীদের জন্য। মন্দির খুলে দেওয়া হলেও একাধিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে দর্শনার্থীদের তা আগেই জানিয়েছিল মন্দির কর্তৃপক্ষ। সেই মতো এ দিন সকাল থেকেই প্রথমে দর্শনার্থীদের তাপমাত্রা পরীক্ষা তারপর স্যানিটাইজার টানেলের মাধ্যমে ঢুকে তবেই মন্দিরের ভেতরে ঢোকার অনুমতি মিলেছে দর্শনার্থীদের। মন্দিরের ভেতরে ঢুকলেও সেখানেও নির্দিষ্ট করে দূরত্ব মেনে মার্ক করে দেওয়া হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য লাইনে দাঁড়াবার। মার্ক করে দেওয়া জায়গাতেই দর্শনার্থীরা লাইনে দাঁড়িয়ে তবেই পুজো দিতে পারবেন। এদিন সকালেই মন্দিরের বাইরে ও ভেতরে মার্ক করা অংশতে দর্শনার্থীরা লাইনে দিয়ে পুজো দিলেন ৷
advertisement
দর্শনার্থীদের সঙ্গে যাতে পুরোহিতদের কোনও স্পর্শ না হয় তা নিয়েও বিশেষভাবে সতর্ক ছিল দক্ষিণেশ্বর মন্দির কর্তৃপক্ষ। মন্দিরের নিরাপত্তারক্ষী থেকে শুরু করে পুরোহিতরা সবাই পিপিই কিট পরেছিলেন। গর্ভগৃহে আপাতত প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মন্দির কর্তৃপক্ষ। মূল মন্দিরের সামনে থেকে অবশ্য দাঁড়িয়ে থেকে পুজো দিতে পারছেন দর্শনার্থীরা। সেক্ষেত্রেও সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনেই দর্শনার্থীদের পুজো দিতে হচ্ছে।
বৃহস্পতিবারই সাংবাদিক সম্মেলন করে জানানো হয়েছিল শুধুমাত্র প্রসাদ নিয়ে পুজো দেওয়া যাবে। কোন রকম ফুল বা সিঁদুর দিয়ে পুজো দিতে পারবেন না ভক্তরা। সেই মোতাবেক বেশিরভাগ দর্শনার্থী প্রসাদ নিয়ে পুজো দিলেও আবার অনেক দর্শনার্থী খালি হাতেই মাকে প্রণাম করে চলে যান। মন্দিরে আসা এক দর্শনার্থী বলেন, "দীর্ঘ আড়াই মাস বাদে মন্দির খোলায় মানসিক শান্তি পেলাম। আজকে মন্দির খুলবে তা শুনে গতকাল রাতে ঘুম হয়নি। সকাল হতে না হতেই মন্দিরে চলে এসেছি। মাকে পুজো দিয়ে বলে গেলাম গোটা বিশ্বকে করোনা মুক্ত কর।"
শনিবার সকালে অবশ্য দেখা গেলো দক্ষিণেশ্বর সংলগ্ন এলাকার মানুষই এদিন মন্দিরে এসে পুজো দিলেন। দক্ষিণ কলকাতা বা মধ্য কলকাতা বা অন্যান্য অংশ থেকে দর্শনার্থীদের আসার সংখ্যা খুবই নগণ্য বলা যায়। অন্যদিকে দীর্ঘ আড়াই মাস বাদে খুলেছে মন্দিরের ডালার দোকানগুলো। মন্দির কর্তৃপক্ষের তরফে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল জোড়-বিজোড় পদ্ধতিতে ডালার দোকান খুলবে। সেই মোতাবেক দোকানগুলি খুললেও দর্শনার্থীরা কম আসায় কিছুটা হতাশ ব্যবসায়ীরা। গত দুমাস ধরে সঞ্চিত অর্থ দিয়েই এঁরা সংসার চালিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে এক ডালা ব্যবসায়ী বলেন, " গত দুমাস অনটনের মধ্যে দিয়ে আমাদের কেটেছে। তবে এখন আমাদের দোকান খুলে দিলেও আমরা নিরাপত্তাটাই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। দর্শনার্থীদের সঙ্গে যাতে আমাদের কোনও ভাবে স্পর্শ না হয় তার জন্য বাস্কেট রাখা হয়েছে ডালা ও টাকা নেওয়ার জন্য। আমরা দোকানের ভেতর একজন বা দুজন করে ঢুকতে দিচ্ছি।"
শনিবার থেকে মন্দির খোলায় প্রচুর ভক্তদের সমাগমের আশা করেছিল মন্দির কর্তৃপক্ষ। যার জেরে গোটা মন্দির চত্বর জুড়ে প্রচুর পুলিশি নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছিল। দীর্ঘ আড়াই মাস বাদে মন্দির এদিন খুললেও অবশ্য দর্শনার্থীদের ভিড় খুব একটা নজরে পড়েনি এ দিন। তবে সে ক্ষেত্রে আগামিকাল অর্থাৎ রবিবার এদিনের থেকে বেশি ভিড় হবে বলেই মনে করছে মন্দির কর্তৃপক্ষ।
SOMRAJ BANDOPADHYAY