রাজ্যে পালাবদলের বছর কয়েক পর থেকেই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধেছিল সিপিএম। নির্বাচনী সমঝোতার পাশাপাশি রাজপথেও বিভিন্ন ইস্যুতে একসঙ্গে হাঁটতে দেখা গিয়েছে দুই দলের নেতা ও কর্মী-সমর্থকদের। কিন্তু গত লোকসভা নির্বাচনের সময় তাল কাটে দুই দলের সম্পর্কে। জোট নিয়ে দড়ি টানাটানিতে দু’তরফের অনড় মনোভাবের ফলে জোট ভেস্তে যায়। জোট ছাড়াই ভোটের ময়দানে নেমে পড়ে দুই দল। তবে মালদা ও মুর্শিদাবাদের দুটি আসনে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রার্থী দেয়নি বামফ্রন্ট। পালটা সিপিএমের দুটি আসন ছেড়ে দেয় কংগ্রেস। যদিও বহরমপুর আসনে আরএসপি-র জেলা নেতৃত্ব প্রার্থী দাঁড় করিয়েছিলো। রাজ্য বামফ্রন্টের নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের কথা না শোনায় শরিক দলের উপর ক্ষুব্ধ হয় আলিমুদ্দিন। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস দুটি আসন ভালো ফল করলেও সিপিএমকে ফিরতে হয় খালি হাতেই। যদিও কংগ্রেসের সাথে জোট না করার জন্য সিপিএমের অন্দরে জোট বিরোধী মত শক্তিশালী হতে থাকে।
advertisement
এরপর উপনির্বাচন গুলিতে, কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে ভোটের সংখ্যায় বিজেপিকে পিছনে ফেলে ভোট বাড়িয়ে দ্বিতীয় স্থানে সিপিএম চলে আসায় সেই মত আরো জোর পেতে থাকে। যদিও এর পরেও জোট করতে তলায় তলায় আলোচনা চালিয়ে যায় দু’পক্ষই। সাগরদিঘি বিধানসভা উপনির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী দেয়। সমর্থনের জন্য প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী চিঠি লেখেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুকে। এবং এরপর সাফল্য মেলে। সেখান থেকে বিজয়ী হন কংগ্রেস প্রার্থী বাইরন বিশ্বাস। কিছুদিন পরে তিনি শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন।
ফের বিভ্রান্তি শুরু হয় সিপিএমের অন্দরে। কংগ্রেস কে ফের সমর্থন করা নিয়ে আপত্তি জানাতে থাকেন দলের একাংশ। তবে রাজ্য কমিটির এক সভায় দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম জানিয়ে দেন একজন ব্যক্তি যদি কোনও অনৈতিক সিদ্ধান্ত নেন তারজন্য কংগ্রেসের সাথে জোট ভাঙার কোনও কারণ নেই। আর কয়েকমাস পরে লোকসভা নির্বাচন। সেই জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে সিপিএম। বর্ধিত রাজ্য কমিটির বৈঠকে প্রশ্ন ওঠে রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে কোন আসনটি জেতার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারে দল। কোনও জেলার নেতাই এর সদুত্তর দিতে ব্যার্থ হয়েছেন। এর পরেই বেশ কয়েকটি জেলার নেতা বলেন একক ভাবে না হলেও যদি কংগ্রেসের সাথে জোট হয় তাহলে কয়েকটি আসনে সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এখানেও দলের জোট বিরোধী অংশের বক্তব্য গত বিধানসভা নির্বাচনে জোট করে কী লাভ হয়েছে? বরং তারপরে একলা চলো নীতিতে ভালো ফল মিলেছে। যেখানে হারানোর কিছুই নেই সেখানে একলা চলো নীতি নিলে সংগঠনের শক্তি বোঝা যাবে। যা আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে মেরামতির সুযোগ পাওয়া যাবে।