সোমবার প্রয়াত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের শ্রাদ্ধবাসর ছিল। সেখানে রাত আট'টা কুড়ি মিনিট নাগাদ পৌঁছন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। দেখা করেন সোমেন মিত্রের স্ত্রী শিখা মিত্র এবং পুত্র রোহন মিত্রের সঙ্গে। সোমেন মিত্রের ছবিতে সাদা রজনীগন্ধা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান।
দীর্ঘদিনের পরিচয় বাংলার এই দুই নেতার মধ্যে। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে অনেকবারই রাজনৈতিক সমীকরণ বদলেছে। বাংলার এই দুই প্রবীণ নেতার রাজনৈতিক ভারসাম্যের বদলও হয়েছে একাধিকবার। কখনও একে অপরের রাজনৈতিক মেরুর বিরুদ্ধে থাকা প্রতিপক্ষ। কখনও একই দাবিতে কলকাতার রাজপথে একে অপরের হাত ধরে একসঙ্গে লড়াই করার শপথ নেওয়া জোট সঙ্গী। রাজনৈতিক জীবনের বহু চড়াই উৎরাইয়ের স্বাক্ষী। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে তাঁর প্রভাব পড়েনি কোনও দিনও। দু'জনের মধ্যে বরাবরই ছিল সৌজন্যের সম্পর্ক। সেই সব কথাই এদিন বারবারই উঠে আসে বিমান বসুর স্মৃতি থেকে।
advertisement
বেশ কয়েক বছর ধরেই বামেদের সাথে আন্দোলনে দেখা যাচ্ছে কংগ্রেসকে। লোকসভা নির্বাচনে জোট না হলেও বিভিন্ন কর্মসূচিতে রাজপথে একসাথে দেখা যায় দু-পক্ষকে। লোকসভা নির্বাচনের 'জট' কাটিয়ে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে ফের একসাথে লড়াই করার প্রস্তুতিও চলছিল জোর কদমে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র দলের রাজ্য কমিটির বৈঠকে ভোটের দামামা বাজিয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান।
কিছুদিন আগেই আরএসপির দফতরে বামফ্রন্টের রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসে কংগ্রেস। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সোমেন মিত্র এবং বিমান বসু। আগামী বিধানসভা নির্বাচনের রণকৌশল নিয়ে আলোচনায় হয়। সিদ্ধান্ত হয় একসঙ্গে দু-পক্ষের লাগাতার আন্দোলন জারি রাখতে হবে। তারই অঙ্গ হিসেবে কখনও হো চি মিন মূর্তির কাছে, কখনও রেড রোডে অন্যান্য নেতৃত্বের সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন বিমান বসু, সোমেন মিত্র।
আগামীতেও বেশকিছু আন্দোলনের প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু এর মধ্যেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন সোমেন মিত্র। ৩০ জুলাই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। বাংলার রাজনীতির একটা যুগের অবসান হয় ঠিকই। কিন্তু এই দুই প্রবীণ নেতার সম্পর্ক বয়ে চলে বাস্তব থেকে স্মৃতির পথ ধরে। লাল গোলাপ ফিরে আসে সাদা রজনীগন্ধা হয়ে।
UJJAL ROY