এ দিন দুই অভিযুক্তকেই বিধাননগর এসিজেএম আদালতে তোলা হয়৷ অভিযুক্ত দুই পুলিশকর্মী এএসআই সন্দীপ পাল এবং সিভিক ভলেন্টিয়ার অভিষেক মালাকারকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷
আরও পড়ুন: 'নিরাপত্তার আশ্বাস' দিয়ে তরুণীর শ্লীলতাহানি! শহরে গুরুতর অভিযোগ খোদ পুলিশের বিরুদ্ধে...
শনিবার রাতে আসানসোল থেকে আসা এক তরুণীকে সাহায্যের নামে যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠে বিধাননগর কমিশনারেটের ট্রাফিক বিভাগের এএসআই সন্দীপ পাল এবং সিভিক ভলেন্টিয়ার অভিষেক মালাকারের বিরুদ্ধে৷ গভীর রাতে সাহায্য চাইলে ওই তরুণীকে বাইকে তুলে দু' জনে শারীরিক ভাবে হেনস্থা করেন বলে অভিযোগ৷ তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় দু' জনকেই৷ এ দিন তাঁদের বিধাননগর এসিজেএম আদালতে তোলা দুই পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধেই ক্ষোভ উগরে দেন বিচারক৷
advertisement
এসিজেএম শান্তনু গঙ্গোপাধ্যায় দুই পুলিশকর্মীর উদ্দেশে বলেন, 'তরুণী অসহায় অবস্থায় সাহায্যে চাইতে এলো৷ কেন আপনারা স্থানীয় থানাকে জানালেন না? বাইকে বসানোর সময় স্থানীয় থানাকে জানিয়েছিলেন?'
আরও পড়ুন: "রাতের কথা মনে করতে চাই না", কলকাতার শিউরে ওঠা অভিজ্ঞতা ভুলতে পারছেন না আসানসোলের নিগৃহীতা!
আসানসোল থেকে এসে বিধাননগর বাস স্ট্যান্ড থেকে গাড়ি না পেয়েই ওই দুই পুলিশকর্মীর সাহায্যে চেয়েছিলেন নিগৃহীতা তরুণী৷ সেই প্রসঙ্গ তুলে বিচারক এ দিন প্রশ্ন করেন, কেন ক্যাব ডেকে দিয়ে ওই তরুণীকে সাহায্য করলেন না অভিযুক্তরা? ক্ষুব্ধ বিচারক বলেন, 'আপনারা পুলিশের উর্দি পরে ছিলেন, তাহলে এরকম করতে গিয়ে অস্বস্তি বোধ হল না? বিশাখা গাইড লাইন পড়েননি? আইনের লোক হয়ে আইন জানবেন না সেটা কখনও হয় না. আপনারা বললে স্থানীয় থানা গাড়ি নিয়ে মহিলা পুলিশ দিয়ে, ক্যাব দিয়ে তরুণীকে গন্তব্যে পৌঁছে দিতো৷'
বিচারক আরও বলেন, 'তরুণীর কাছে কোনও বিকল্প ছিল না বলেই তিনি পুলিশের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন৷ কারণ সেখানেই তিনি সবথেকে বেশি নিরাপদ বোধ করেছিলেন৷ কেন আপনারা ওই মহিলাকে বাইকে বসালেন?'
অভিযুক্ত এএসআই-এর আইনজীবী তখন বলার চেষ্টা করেন, এত নিয়ম মানতে গেলে কারও উপকার করা সম্ভব হবে না পুলিশের পক্ষে৷ এ কথা শুনে বিচারক পাল্টা বলেন, 'এ রকম উপকার করার প্রয়োজন নেই৷'
অভিযুক্ত সিভিক ভলেন্টিয়ারের আইনজীবী যুক্তি দেন, যেহেতু ওই সিভিক ভলেন্টিয়ার বাইক চালাচ্ছিলেন, তাই পিছনে কী হচ্ছে, তা তিনি বুঝতে পারেননি৷ এই যুক্তিও নস্যাৎ করে দেন বিচারক৷ তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, 'আপনার বাইকে কত জায়গা ছিল যে আপনার পিছনে কী হচ্ছে বুঝতে পারলেন না?' বিচারক আরও প্রশ্ন করেন, রাত দশটার সময় ডিউটি শেষ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও অত রাতে ওই সিভিক ভলেন্টিয়ার ওখানে কী করছিলেন৷
বিচারক বলেন, 'ডিউটি শেষ হয়ে যাওয়ার পর তো আপনি এএসআই-এর কথা শুনতে বাধ্য নন৷ আপনার তো বলা উচিত ছিল যে এসব করা উচিত নয়৷ আমি ফেঁসে যাবো৷'
পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার সময় অভিযুক্ত দু' জনেই মত্ত অবস্থায় ছিলেন৷ নিগৃহীতা তরুণীর জবানবন্দি রেকর্ড করার পাশাপাশি দুই অভিযুক্তের টিআই প্যারেড করানোর জন্যও এ দিন আদালতে আবেদন জানানো হয়েছে পুলিশের তরফে৷ বিধাননগর পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে এসিপি পদমর্যাদার এক আধিকারিককে দিয়ে ঘটনার তদন্ত করানো হবে৷ এসিপি রূপশ্রী পাহাড়ি তদন্তকারী অফিসার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে৷