সকালে এসেছিল প্রতিরক্ষামন্ত্রীর চিঠি। বিকেলে পাল্টা চিঠি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর অভিযোগের জবাবে অবস্থান স্পষ্ট করতেই চিঠি মুখ্যমন্ত্রীর। টোল প্লাজায় সেনা নামানোর কেন্দ্রের নীতির বিরুদ্ধেই মুখ খুলেছিলেন তিনি। সেনার বিরুদ্ধে নয়। চিঠিতে স্পষ্ট করলেন মমতা। আরও একবার জানিয়ে দিলেন, সেনা নামানো হয়েছিল রাজ্যকে না জানিয়েই।
প্রতিরক্ষামন্ত্রীর চিঠি পেয়ে অসন্তুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সেনাবাহিনী সম্পর্কে তথ্য জানতে চাননি তিনি ৷ তাঁর বক্তব্য, তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি সম্পর্কে বলেছিলেন ৷ সেনাবাহিনীকে কোনওভাবে ছোট করেননি বলেই অভিমত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৷ প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘আমাদের যথেষ্ট জাতীয়তাবোধ আছে ৷ সেনাকে অপমান করতে কিছু বলিনি ৷ আমি আপনার সরকারের নীতির বিরুদ্ধে ৷ রাজ্যকে না জানিয়েই সেনা মোতায়েন তো আপনারাই করেন ৷’
advertisement
সোমবার সকালে নবান্নে পৌঁছেছিল প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পরিকরের চিঠি। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টা চিঠিতে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর অভিযোগ একে একে খারিজ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। অসন্তুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, চিঠিতে ‘অপমান’ করেছেন পরিক্কর ৷ তিনি অভিযোগ করেন, একজন মুখ্যমন্ত্রীকে কিভাবে চিঠি পাঠানো উচিত তা জানেন না প্রতিরক্ষামন্ত্রী ৷ পাল্টা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর চিঠির উত্তরে তিনি লিখেছেন, ‘মানুষের কথা বলায় আপনারাই একমাত্র মুখপাত্র ৷ একজন মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে এধরণের মন্তব্য ৷ একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছ থেকে অনভিপ্রেত ৷ একজন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এই মন্তব্য অপমানজনক ৷ এমন হাস্যকর বক্তব্য আপনার কাছে আশা করিনি ৷ আশা করি আপনার এই মনোভাব পরিবর্তন করবেন ৷’
প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিক্করের চিঠির জবাবে কেন্দ্রীয় সরকারের রাজনৈতিক দর্শনেরও সমালোচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ পরিক্করকে পাঠানো চিঠিতে মমতা জানালেন, ‘রাজনৈতিক দল ও নেতা মানেই বৈভব ৷ যে বৈভব প্রমাণ করা যায় না ৷ এটাই আপনাদের সাধারণ দর্শন ৷ এই দর্শন আপনাদের দলের ক্ষেত্রেই খাটে ৷ আমরা সেই দলের মধ্যে পড়ি না ৷’
প্রতিরক্ষামন্ত্রীর চিঠিতে ক্ষুদ্ধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের ক্ষোভ উগরে চিঠিতে লেখেন, ‘আপনার চিঠি পেয়ে আমি হতবাক ৷ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা মেটাতে সেনাকে ব্যবহার ৷ আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এরকম দেখেনি ৷’
পয়লা ডিসেম্বর রাজ্যের বিভিন্ন জাতীয় সড়কে সেনা মোতায়েন নিয়ে কেন্দ্রকে সরাসরি আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেশের পরিস্থিতি জরুরি অবস্থার চেয়েও খারাপ বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। জাতীয় সড়ক থেকে সেনা প্রত্যাহারের দাবিতে ত্রিশ ঘণ্টারও বেশি তিনি থেকে যান রাজ্য প্রশাসনের সদর দফতর নবান্নে। শুরু হয় বিতর্ক। তারই পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার সকালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লেখেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর।
চিঠিতে তিনি লেখেন, সেনাবাহিনী সম্পর্কে মন্তব্য করায় তিনি ব্যথিত। মর্মাহত। রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানিয়েই টোল প্লাজায় গাড়ির সংখ্যা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করছিলেন সেনাকর্মীরা। এদিকে, চিঠি পাওয়ার আগেই কিভাবে তা সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হল তাই নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং।