চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হতে চলেছে সিভিক পুলিশের সার্ভিসের মেয়াদ ৷ আশা-আশঙ্কার দোলাচলে সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভাগ্য ৷ এদিন সেই মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিল হাইকোর্ট।
এর আগে সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ই বহাল রেখে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ দুর্নীতি রুখতে সিভিক পুলিশ নিয়োগে ৩ সদস্যের রিভিউ কমিটি গড়ার নির্দেশ দেয় রাজ্যকে ৷ কমিটিতে অর্থ ও পরিবহণ দফতরের প্রধান সচিব ও বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার থাকবেন ৷ কমিটির সুপারিশ মেনে সিভিক পুলিশ নিয়োগ করা হবে ৷ কিন্তু তিন মাস কেটে যাওয়ার পর কি পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য তা বুধবার জানতে চায় রাজ্য ৷ হাইকোর্ট এদিন অ্যাডভোকেট জেনারেলকে প্রশ্ন করে, ‘সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ মেনে কী করেছে রাজ্য? কোনও কমিটি কি আদৌ গঠন হয়েছে? কমিটি তৈরি হলে তার অবস্থান কী?’ আজ মামলার শুনানিতে জবাব দেওয়ার কথা রাজ্যকে ৷
advertisement
এদিন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনেরাল (AG) জয়ন্ত মিত্র হাইকোর্টকে জানান, ‘রাজ্যে নিযুক্ত ১ লক্ষ ২০ হাজার সিভিক ভলান্টিয়ার’ ‘স্বচ্ছতা আনতে নতুন কমিটি গঠন হয়নি ৷ সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ মেনে হয়নি কমিটি ৷ সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করছে রাজ্য ৷ স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদনও করেছে রাজ্য ৷’
চলতি বছরের ২০ মে বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় সিভিক পুলিশের নিয়োগে অনিয়মের কথা মেনে নিয়ে রায় দেন, বারিকুল ও সারেঙ্গা থানায় ২০১৩ সালের নিযু্ক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়োগপত্র বাতিল করা হবে ৷ এর ফলে চাকরি হারান প্রায় তিনশোর অধিক সিভিক ভলান্টিয়ার ৷
বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই রায়ে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করে সারেঙ্গা ও বারিকুল থানার চাকরি হারানো ভলান্টিয়াররা ৷ বিচারপতি নিশীতা মাত্রের ডিভিশন বেঞ্চ স্থগিতাদেশের আবেদন খারিজ করে সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ই বহাল রাখে ৷
বাঁকুড়ার দুই থানায় সিভিক পুলিশ ভলান্টিয়ার নিয়োগের নথি দেখে শুনানিতেই বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৩র ১২ এপ্রিল নেওয়া ইন্টারভিউয়ে অনিয়মের কথা হাইকোর্টে দাঁড়িয়ে কার্যত স্বীকার করে নিয়েছিলেন সরকারি আইনজীবীও।
সারেঙ্গা থানায় ১ দিনে ১৩৫১ জনের ইন্টারভিউ নেওয়া হয় ৷ এর মধ্যে নিয়োগ ১২০ জনকে নিয়োগ করা হয় ৷ আর বাড়িকুল থানা ১ দিনে ৮৭৫ জনের ইন্টারভিউয়ের পর ২০০ জনকে নিয়োগ করা হয় ৷ ২০ মে হাইকোর্টের এই রায়ের পর বাতিল হয়ে যায় এই ৩২০ জন সিভিক পুলিশের নিয়োগপত্র ৷ রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘সিভিক পুলিশ ভলান্টিয়ার ফোর্স নিয়োগে ধোঁকাবাজি ৷ নিয়োগে কোনও স্বচ্ছতা নেই ৷ বাঁকুড়ার ঘটনা হিমশৈলের চূড়ামাত্র ৷’
আগামী দিনে সিভিক পুলিশ নিয়োগে দুর্নীতি রুখতেও তৎপর হাইকোর্ট। ভবিষ্যতে বাঁকুড়ার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতে রক্ষাকবচও স্থির করে দেবে রাজ্যের গঠিত কমিটি। সিভিক পুলিশ মামলার রায় দিতে গিয়ে নিয়োগের মানদন্ড স্থির করে দেয় হাইকোর্ট।