নিউ মার্কেট চত্বরের একাধিক মুরগির দোকানে হানা দিয়ে দেখা গেল, মুরগির মাংসের মধ্যে জল ঢুকিয়ে ওজন বাড়িয়ে ঠকানো হচ্ছে গ্রাহকদের৷ কীভাবে চলছে এই কারবার? লুকনো ক্যামেরায় ধরা পড়ে গিয়েছে সেই ছবি৷ নিউ মার্কেট চত্বরের একাধিক মাংস বিক্রেতা পালক ছাড়িয়ে মাংস বের করার পর গোটা মুরগির মধ্যে সিরিঞ্জের সাহায্যে জল ভরে রেখে দিচ্ছে৷ এর পর কোনও ক্রেতা মাংস কিনতে এলে সেই মাংসা ওজন করে কেটে দেওয়া হচ্ছে৷ অভিযোগ, প্রতিটি মুরগিতে এ ভাবে গড়ে দুশো থেকে তিনশো মিলিলিটার মতো জল ভরে দেওয়া হচ্ছে৷ মাংস কাটার সময় বেরিয়ে যাচ্ছে সেই জল৷ ফলে, প্রতারণার কারবার সহজে ধরতে পারছেন না গ্রাহক৷ অজান্তের বেশি দাম দিয়ে কম মাংস পাচ্ছেন তাঁরা৷
advertisement
নিউ মার্কেট চত্বরে গিয়ে সুরজ নামে এক মাংস বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলেন নিউজ এইট্টিন বাংলার প্রতিনিধি৷ পরিচয় লুকিয়ে তিনি বলেন, হোটেলে সরবরাহের জন্য মাংস নেওয়া হবে৷ ফলে, বেশি লাভ প্রয়োজন৷ চালু ভাষায় বিক্রেতাকে বলা হয় মাংস 'ফাইল' করে দিতে৷ দেখা যায়, একটি গোটা মুরগির ওজন হয় এক কেজি তিনশো গ্রাম৷ এর পর সিরিঞ্জ দিয়ে সেই মাংসের মধ্যেই জল ভরে দেওয়া হয়৷ তার পর সেই মাংসেরই ওজন দাঁড়ায় দেড় কেজি৷ এ ভাবেই দিনের পর দিন চলছে প্রতারণার কারবার৷
তবে শুধু আর্থিক ক্ষতি নয়, এই প্রতারণার কারবারে মানুষের শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কাও থাকছে৷ কারণ, কোনও পরিশুদ্ধ জল নয়, গঙ্গা থেকে যে জল নিউ মার্কেট চত্বরে পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়, সেই জলই সিরিঞ্জের সাহায্যে মুরগির মাংসের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ ফলে এই মাংস খেলে জলবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা৷
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ বিভাগের অধ্যাপক গবেষক প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন , 'ওই জলের মধ্যে বেশকিছু ভারী পদার্থ রয়েছে। যেমন আর্সেনিক, শিসা, ক্যাডমিয়াম থাকার সম্ভাবনা বেশি।'
প্রশ্ন উঠছে, কলকাতা পুরসভার সদর দফতর থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে নিউ মার্কেট৷ পুরসভার স্বাস্থ্য, বাজার বিভাগের নাকের ডগায় কীভাবে দিনের পর দিন এই প্রতারণার কারবার চলছে? মানুষ দিনের পর দিন প্রতারণার শিকার হলেও কেন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না পুরসভা? নিউ মার্কেটের মতো নামী বাজারেই যদি এমন প্রতারণার কারবার চলে, তাহলে শহর বা রাজ্যের অন্যত্র মানুষ যে একই ভাবে প্রতারিত হচ্ছেন না, তার নিশ্চয়তা কোথায়?