কলকাতা: প্রেমের সম্পর্কে একজন নাবালিকার দেওয়া সহবাসের সম্মতি আইনত গ্রহণযোগ্য নয় পর্যবেক্ষণ কলকাতা হাইকোর্টের। সম্প্রতি, পকসো ধারায় নিম্ন আদালতের দেওয়া যাবজ্জীবন সাজার বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন দোষী সাব্যস্ত তরুণ। সেই মামলায় তরুণের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে বিচারপতি রাজাশেখর মন্থা এবং বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ। এর পাশাপাশি নির্যাতিতাকে বাড়তি দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। মোট ৪ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ ডিভিশন বেঞ্চের।
advertisement
অতিরিক্ত ২ লক্ষ টাকা দেবে স্টেট লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটি। উল্লেখ্য, এর আগে অভিযুক্তকে দূ’লক্ষ টাকা জরিমানা করেছিল নিম্ন আদালত। সেই দু’লক্ষ টাকা অভিযুক্ত দিলে, তার মধ্যে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা নির্যাতিতাকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল নিম্ন আদালত। পাশাপাশি বাকি ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে রাজ্য। সেই নির্দেশ বহাল রেখে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সেই অর্থ নির্যাতিতাকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
কোর্টের খবর, ২০১৪ সালে ২৩ বছরের তরুণের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন ১২ বছরের নাবালিকা। সেই সম্পর্কের অছিলায় ও বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নাবালিকার সঙ্গে একাধিকবার সহবাস করেন তরুণ। পরবর্তীতে নাবালিকা গর্ভবতী হয়ে পড়লে বিয়েতে রাজি হয়নি ওই তরুণ। ২০১৭ সালে তরুণের বিরুদ্ধে পকসো ধারায় নারকেলডাঙা থানায় অভিযোগ করে মেয়েটির পরিবার। সেই মামলায় নাবালিকাকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে তরুণকে যাবজ্জীবন সাজা দেয় নিম্ন আদালতের বিচারক। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয় তরুণ।
অভিযুক্ত তরুণের আইনজীবীদের অভিযোগ ছিল, নির্যাতিতার বয়সের প্রয়োজনীয় প্রমাণ দেওয়া হয়নি। তাদের আরও যুক্তি ছিল, ডিএনএ পরীক্ষা অনুযায়ী নির্দিষ্ট ভাবে অভিযুক্তকেই নির্যাতিতার সন্তানের বাবা বলা যায়না। এর পাশাপাশি দেরিতে থানায় অভিযোগ করা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন অভিযুক্তের আইনজীবীরা। তবে তাঁদের সব যুক্তি খারিজ করে দিয়েছে কোর্ট। বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা এবং বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ডিএনএ রিপোর্টে তরুণ যে নির্যাতিতার সন্তানের বাবা নয় সেই কথাও বলা হয়নি এবং নির্যাতিতার বয়ানের সাথে মিল রয়েছে মেডিক্যাল রিপোর্টেও। এর পাশাপাশি কোর্টের আরও পর্যবেক্ষণ, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় তরুণের উপর বিশ্বাস করেছিলেন নাবালিকা, তাই গর্ভবতী হয়ে পড়ার পর অভিযোগ জানানো হয় পুলিশে। নাবালিকার বয়সের বিষয়ে নির্দিষ্ট প্রমাণ রয়েছে তার জন্ম সংক্রান্ত নথিতে, জানিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ।
